সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রকৃতির রুদ্ররোষে কেরলের ওয়ানড় (Wayanad) মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। নিখোঁজ দুশোর বেশি। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার জঙ্গলঘেরা গোটা চারেক গ্রাম কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এত বড় বিপর্যয় কীভাবে? ধস নামার কারণ কী? এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন রিসোর্সেস অ্যানালিসিস ডিভিশন অফ দ্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্সেস (NCESS)-এর প্রাক্তন বিজ্ঞানী কে সোমন। কী বলেছেন তিনি?
‘দ্য নিউজ মিনিট’কে কে সোমন জানান, ওয়ানড় বিপর্যয়ের পিছনে রয়েছে বেশ কিছু ভূতাত্ত্বিক কারণ। পাহাড়ি জমি ব্যবহারের ধরনও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, কোনও এলাকার মাটির ধরন, পাথরের গঠন ধসের অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়াও পাহাড়র ঢাল, মাটির ঘনত্ব, মাটি এবং পাথরের প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। এবং অবশ্যই ভারী বৃষ্টি ভূমিধসের কারণ হয়ে ওঠে। সোমনের বক্তব্য, যেভাবে ওয়ানড়ে ধস নেমেছে তাকে ভূগোলের পরিভাষায় বলা হয় ‘স্যাডল’। এই ‘স্যাডল’ মূলত দু’ভাবে হয়। ফাটল অথবা ভূমিক্ষয়ের কারণে। ভূমিক্ষয় মূলত চুনাপাথরের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যদিও ভেলারিমালার ক্ষেত্রে পাথরের ফাটলই কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ঋণের বোঝা কমাচ্ছে রাজ্য, তথ্য তুলে ধরে বিধানসভায় দাবি চন্দ্রিমার]
সোমনের বক্তব্য, পাথুরে ফাটলে বিপুল পরিমাণ জল ঢুকলে তা একসময় বড়সড় ফাটলে পরিণত হয়। এমনকী ওই ভূমিখণ্ড পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসতে পারে। মনে করা হচ্ছে বিপর্যয়ের রাতে তেমনটাই ঘটেছিল। ভেলারিমালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে অল্প সময়ের মধ্যে হুড়মুড় করে ধস নামে। এত দ্রুত গতির সঙ্গে সেই ধস নেমেছিল যে, সামনে যা পেয়েছে সব নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। কে সোমনের বক্তব্য, এর আগেও ১৯৮৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মুন্ডাক্কাই এবং চূড়ালমালায় বেশ কয়েক বার ছোটখাটো ধস নেমেছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে, ধসপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও ওই এলাকায় বসতি গড়ে তুলতে দিল কেন প্রশাসন? তাহলে কেবল বৃষ্টি, শুধু ভূমিধস নয়, সাড়ে তিনশো মানুষের মৃত্যুর কারণ দুর্নীতিও!
[আরও পড়ুন: উপত্যকায় অশান্তির জের! BSF-এর প্রধান ও উপপ্রধানকে সরাল কেন্দ্র]
বিপজ্জনক ভাবে বসতি গড়ার পাশাপাশি যথেচ্ছ ভাবে গাছ কাটা, পাহাড় কেটে চাষের কাজ করা, হ্রদ এবং জলাভূমিগুলিকে ভরাট করে দেওয়াও এই ধ্বংসলীলার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলেই সেদিন গভীর রাতে একসঙ্গে প্রায় ৮৬ হাজার বর্গ মিটার এলাকায় ধস নেমেছিল। গোটা এলাকা ভূমিধসে পাহাড় ভেঙে নেমে আসে ইরুভাজিনঝি নদীতে। অভিশপ্ত রাতে ধসের মাটি, রাস্তা, ঘর-বাড়ি মানুষ জলস্রোতে ভেসে যায় প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে।