shono
Advertisement

কংগ্রেসে গেলে পিকে কী ভূমিকা নেবেন?

তিনি কি কংগ্রেস ঢুকে নেতা হয়ে দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হবেন?
Posted: 02:12 PM Apr 23, 2022Updated: 02:12 PM Apr 23, 2022

পিকে শতাব্দী-প্রাচীন কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন, এমন সম্ভাবনা জোরালো। প্রশ্ন হল, কংগ্রেসে পিকে-র ভূমিকা কী হবে? তিনি কি কংগ্রেস ঢুকে নেতা হয়ে দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হবেন? না কি ভোটকুশলী ও মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট হয়েই রয়ে যাবেন? কলমে জয়ন্ত ঘোষাল 

Advertisement

ভোটকুশলী এবং মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে আবার সর্বভারতীয় মঞ্চে জোরদার আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশান্ত কিশোর ওরফে ‘পিকে’ গত কয়েক দিনে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। ঘন ঘন সেসব বৈঠকের জেরে এই কৌতূহল ফেনায়িত হয়েছে যে, পিকে কি শতাব্দী-প্রাচীন কংগ্রেস নামক সর্বভারতীয় দলটিতে যোগ দিচ্ছেন? বা, দিয়েছেন? এবং আরও জরুরি প্রশ্ন হল, কংগ্রেসে পিকে-র ভূমিকা ঠিক কী হবে? তিনি কি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ‘নেতা’ হয়ে যাবেন? কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হবেন? পিকে যে এই দলের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হতে পারেন অতীতে সে নিয়ে আলোচনা হয়নি এমনও নয়। এখন প্রশ্ন, রাজনৈতিক পদাধিকারী হলে, তাতে কংগ্রেস ও পিকে-র বেশি লাভ? না কি ভোট-মিডিয়া তথা সার্বিক রাজনীতির স্ট্র্যাটেজিস্ট হওয়াতেই বেশি লাভ?

[আরও পড়ুন: বাংলা-মডেল সাড়া ফেলেছে দেশে, তাই চলছে বদনাম করার খেলা]

এই মুহূর্তে শুধু কংগ্রেস নয়, দেশের বহু অ-বিজেপি ও অ-কংগ্রেসি আঞ্চলিক দলের সঙ্গেও পিকে-র সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. সি. আর পিকে-র ‘ক্লায়েন্ট’, আবার অন্ধ্রপ্রদেশের জগন-ও পিকের বিশেষ ঘনিষ্ঠ। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে যেমন, তেমনই এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারও তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। এই কথা ভারি সত্যি যে, কোনও কোনও দল বা শীর্ষ নেতার সঙ্গে পিকের জীবনে দুর্যোগপূর্ণ প্রতিকূল আবহাওয়াও তৈরি হয়েছে। জনসংযোগের ক্ষেত্রে এমন ‘কভি খুশি কভি গম’ হয়েই থাকে। কিন্তু পিকে বিগড়ে যাওয়া সম্পর্ককেও স্ব-গুণে আবার মেরামত করে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন। কটুতার মেঘ কেটে আবার সম্পর্কের ‘ফিল গুড’ মহিমা ফিরে আসে। তা না হলে সম্প্রতি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (যিনি এখন বিজেপিকে নিয়ে বেশ ঝামেলার মধে্য আছেন) দিল্লিতে পিকে-কে নৈশভোজে ডাকতে যাবেন কেন? তামিলনাড়ুর স্ট্যালিন, এমনকী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের সঙ্গেও তো পিকের নিগূঢ় সম্পর্ক। ক্যাপ্টেন অমরিন্দর অথবা উত্তরপ্রদেশের অখিলেশের সঙ্গে পিকের সম্পর্কের গুমট কাটেনি বটে, সেখানে এখনও দখিনা বাতাস অনুভব করা যাচ্ছে না, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দে্যাপাধ্যায়ের সঙ্গে এখনও তাঁর সম্পর্ক অবিচল। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মমতার বিপুল জয়লাভের পরই পিকে তাঁর নিজের সংস্থা ‘আইপ্যাক’ থেকে ইস্তফা দেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আইপ্যাকের চুক্তি বহাল থাকলেও সেই সংস্থা থেকেই পিকে সরে দাঁড়ান।

মনে করা হচ্ছে, যেহেতু দেশের প্রধান প্রায় সমস্ত অ-বিজেপি ও অ-কংগ্রেসি দলের কান্ডারিদের সঙ্গে পিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, সেহেতু ২০২৪ সালের আগে কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলগুলোর মধে্য মোদি তথা বিজেপি-বিরোধী ঐক্যরচনার প্রধান স্থপতি হয়ে উঠতে পারেন তিনি। কেননা, নির্মম সত্যি যে, কংগ্রেসকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শুধু অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে জোট গড়ে মোদি-বিরোধী সরকার গঠনের সম্ভাবনা কার্যত অসম্ভব, খুবই কঠিন প্রকল্প। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, গুজরাট, ছত্রিশগড়, হিমাচলপ্রদেশ-সহ বহু রাজ্যেই মূল লড়াইটা বিজেপি বনাম কংগ্রেসের। এসব রাজে্য উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের মতো আঞ্চলিক দল নেই। এই কথা গোয়ার নির্বাচনী ফলাফলের পরেই পিকে-ই জানান এক সাক্ষাৎকারে। তাহলে পিকে কি এখন কংগ্রেস ও এই সমস্ত যুযুধান আঞ্চলিক দলের মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে পারেন? অমিয় চক্রবর্তী লিখেছিলেন, মেলাবেন তিনি মেলাবেন। ভারতের রাজনীতিতে মোদি-বিরোধিতার পরিসরে পিকেই কি এখন তবে অবিসংবাদী এক ‘মেল্টিং পট’? তবে তার আগে কংগ্রেসকে দুর্বলতা ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে।

২০২৪-এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের লড়াইয়ে কি এই বিরোধী-ঐক্যের রিহার্সাল দেখা যেতে পারে? বিরোধী-ঐক্য ভাঙতে বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে আসরে নামবে এটা স্বাভাবিক। বিজেপি তো বিজেপির কাজ করবে, কিন্তু পিকে কি সেই সাম-দান-দণ্ড-ভেদের কৌশলের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন? ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক’টা আসনে লড়বে, আর আঞ্চলিক দলগুলো কতগুলো আসনে লড়বে- এই অনুপাতের গণিত নিয়েও কি পিকে হোমওয়ার্ক শুরু করছেন?

পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিমত, বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর বোঝাপড়ার কাজটি করতেও পিকে উদ্যোগী হতে পারেন। গোয়া ও মণিপুরের পর অসমেও কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলে নেতারা চলে আসছেন। কিন্তু মতপার্থক্য থাকলেও এনসিপি যেমন ইউপিএ-র জোটে আছে, সেভাবে কংগ্রেস ভেঙে নেতাদের বিজেপিতে চলে যাওয়ার চেয়ে তৃণমূলে কংগ্রেসে যাওয়া সোনিয়া-রাহুলের জন্যও মন্দের ভাল। সেক্ষেত্রে অন্তত ইউপিএ-র ঝুড়িতেই ভোটটুকু থেকে যায়। সমস্যা একটাই। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক উপদেষ্টা আহমেদ প্যাটেলের জায়গাটি যদি পিকে-কে দেওয়াও হয়, তিনি কি প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে পারবেন, যেমনটা থাকতেন আহমেদ প্যাটেল। বা, পিকে চাইলেও কি সর্বভারতীয় মিডিয়া তাকে গোপনচারী হতে দেবে?

[আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অর্থনীতিবিদরা, ভারতও কি দেউলিয়া হওয়ার পথে?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement