সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Rai) সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা মাধবী মুখোপাধ্যায় (Madhabi Mukherjee)। সেই প্রথম। ১৯৯২ সালে ঝড় তোলা সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন ‘ইলাস্ট্রেটেড উইকলি’ পত্রিকার সাংবাদিক এস এন এম আবদি। বিতর্কের সুনামি উঠেছিল।
এখন অনুবাদ করলেন শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।
তার পরেই এল ‘চারুলতা’…
হ্যাঁ। এক দিন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ উপন্যাসটি পাঠালেন। এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই সত্যজিৎবাবু ‘চারুলতা’ তৈরি করেছিলেন। আমি তাঁকে জানালাম, উপন্যাসটি পড়েছি। তিনি আবার পড়তে বললেন। আমি পড়লাম। আর কী জানতে চাইছেন বলুন?
সব কিছু!
সত্যজিৎবাবুর বাড়ি থেকে, তাঁর স্ত্রী মঙ্কুদির কাছ থেকে যে ভালবাসা পেয়েছি তা কখনওই ভোলার নয়। মঙ্কুদি অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন। সমাজের উচ্চস্তর থেকে অনেকটাই দূরে ছিলাম। ফিল্মের চারু কিন্তু সমাজের উচ্চস্তরের ছিল। চারু হয়ে উঠতে আমায় সাহায্য করেছিলেন মঙ্কুদি। আমার কাছে সেটি একেবারেই অন্য জগৎ ছিল। কিন্তু, সত্যজিৎবাবু এবং তাঁর স্ত্রী খুব সাহায্য করেছিলেন। একটি গান মনে করানোর জন্য সত্যজিৎবাবু একটি বিশাল টেপরেকর্ডার দিয়েছিলেন যাতে বাড়িতে অনুশীলন করতে পারি। কিন্তু, যন্ত্রটি নষ্ট করে ফেলি। আপনি যেমন ব্যবহার করছেন, তখনকার দিনে এমন ছোট ক্যাসেট পাওয়া যেত না। আমার কাছে তখন ঈশ্বরকে স্মরণ করা ছাড়া আর কোনও পথ ছিল না। যাই হোক, কোনও মতে সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পাই। ‘চারুলতা’য় কাজ করা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা ছিল। তার পর আমার কেরিয়ারে এল ‘কাপুরুষ’। এটাই আমার সঙ্গে সত্যজিৎবাবুর শেষ সিনেমা। কিন্তু এটা আমার কেরিয়ারের শেষ সিনেমা ছিল না। এর পরেও বহু সিনেমায় অভিনয় করি।
‘কাপুরুষ’ আপনাদের শেষ সিনেমা কেন?
এর কারণ স্রেফ ভুল বোঝাবুঝি।
কাদের মধ্যে?
ঘটনাটার সঙ্গে ইউনিটের সবাই জড়িত ছিলেন। সবার মধ্যে এই ধারণা জন্মেছিল যে, আমি খুবই খারাপ মহিলা। সেই সময় সমাজ কেমন ছিল তা আপনি জানেন। যা ঘটেছিল তা নতুন ছিল না। তবে তখন পুরো দোষটাই মহিলাদের দেওয়া হত। আজ আমার স্বামীকে ছেড়ে চলে আসার ২৪ বছর পরেও আমাকেই দোষ দেওয়া হয়। পুরুষপ্রধান সমাজে সবসময় মহিলারাই দোষী হন। আজ যে জায়গায় আছি তখনও সেই জায়গাতেই ছিলাম। সমাজের কোনও পরিবর্তন হয়নি।
[আরও পড়ুন: বিক্রি হয়ে গেল সুশান্তের স্মৃতিবিজড়িত ফ্ল্যাট, কিনে নিলেন বলিউড নায়িকা! ]
আপনার এবং সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে ঠিক কী ঘটেছিল?
আজ পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর দিইনি। যত বারই এই প্রশ্ন করা হয়েছে, তত বারই আমি এড়িয়ে গিয়েছি। এর কারণ হল, কখনওই মিথ্যা বলতে চাইনি। ঘটনাটি সম্পর্কে বলতে গেলে সত্যিটাই প্রকাশ্যে আসা উচিত।
আমি বুঝতে পারছি আপনি ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছেন।
আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু আমি যাঁর জন্য কষ্ট পেয়েছিলাম, তিনি আমার চেয়ে ১০ গুণ বেশি কষ্ট সহ্য করেছিলেন। তাঁর এই কষ্ট পাওয়া আমার কষ্টটাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।
কে আপনার ১০ গুণ বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন?
দ্বিতীয় ব্যক্তি। আমার বিপরীতে যিনি ছিলেন। তিনি জীবনে আরও অনেক কিছু করতে পারতেন।
আপনি কারও নাম বলছেন না কেন?
কারণ আমি এমন কাউকে অসম্মান করতে চাই না যাঁকে সারা পৃথিবী সম্মান করে। এমন কিছু বলতে চাই না যাতে তাঁর ভাবমূর্তিতে কোনও দাগ পড়ে।
আপনি তাঁর ভাবমূর্তিতে কোনও দাগ ফেলছেন না। পুরুষ হোন বা মহিলা, বহু বিখ্যাত মানুষ প্রেমে পড়েছেন এবং কষ্ট পেয়েছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আপনি বললেন যে সমস্যার শুরু ‘কাপুরুষ’ ছবির শুটিংয়ের সময়।
হ্যাঁ। সেই সময়ই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমায় থামতে হবে। স্থির করি যে আর কোনও দিন ওঁর সঙ্গে কাজ করব না। আমি আমার সিদ্ধান্তে শেষ দিন পর্যন্ত অটল ছিলাম।
কিন্তু আপনি মাঝপথে ‘কাপুরুষ’ ছেড়ে দেননি…
না। আমি শুটিং শেষ করেছিলাম। শুটিংয়ের মাঝে আমি আমার প্রবল যন্ত্রণাকে আসতে দিইনি। খুব কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু আমি ফিল্মের কাজ শেষ করেছিলাম।
(ক্রমশ)