স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস বা ডব্লুবিসিএসে চাকরি করতে গেলে বাংলা ভাষার লিখিত পরীক্ষায় পাস করতেই হবে। ক’দিন আগে এই নতুন নিয়ম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। যার বিরোধিতায় আদা-জল খেয়ে নেমে পড়লেন বাংলারই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে পথে নেমে সর্বাত্মক গণআন্দোলনের পাশাপাশি আদালতে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। বিধানসভার ভিতরেও এনিয়ে সরব হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার কলকাতায় একটি ভাষা সংখ্যালঘু সংগঠনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘পুরনো ব্যবস্থা বদলের কোনও দরকার নেই। বিধানসভার অধিবেশন শুরু হলে আমরা জোরদারভাবে ইস্যুটি তুলব।’’ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে হিন্দি ও অন্যান্য অ-বাংলা ভাষাভাষীদের ‘হক কেড়ে নেওয়া হয়েছে’বলে মন্তব্য করে এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবিতে পথে নেমে গণআন্দোলন করার ও আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দুর এই অবস্থানকে ‘উসকানিমূলক’ও বাংলায় ভাষাবিদ্বেষের বিষ ছড়ানোর অপচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
[আরও পড়ুন: কলকাতা পুলিশ থেকে সরলেন দময়ন্তী সেন! পাঠানো হল রাজ্য পুলিশের ট্রেনিং বিভাগে]
তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, একদিকে বাংলার জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন দিয়ে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে উসকানি দিয়ে চলেছেন বাংলা ভাষার প্রসারের বিরুদ্ধে। এই দ্বিচারিতাই বিরোধী দলনেতার আসল রূপ! দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে গেলে সেই রাজ্যের ভাষা জানা বাধ্যতামূলক। ওই রাজ্যগুলিতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভাষা নিয়ে একটি পেপারে পরীক্ষায় বসাটা আবশ্যিক শর্ত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এতদিন তেমন শর্ত ছিল না। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে বিসিএস মেনসে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, নেপালি বা সাঁওতালি- এই পাঁচটি ভাষার মধ্যে যে কোনও একটিতে বসা যেত।
একমাত্র যাঁদের মাতৃভাষা নেপালি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে এনিয়ে সরব ছিল বিভিন্ন মহল। তাদের বক্তব্য ছিল দেশের আর পাঁচটা রাজ্যের মতো বাংলাতেও প্রশাসনিক গুরুদায়িত্ব পালন করতে হলে বাংলা ভাষায় কথা বলা, বোঝা, বাংলা পড়তে জানা ও লিখতে পাড়া আবশ্যিক শর্ত হওয়া উচিত। বেশ কয়েক বছর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক কর্তা-সহ নানা মহল থেকেই ডব্লুবিসিএস মেনসে বাংলা ভাষায় একটি বাধ্যতামূলক পেপার রাখার দাবি উঠছিল। গত ২০২২-এর মে মাসে আয়োজিত ডব্লুবিসিএস অ্যাসোসিয়েশনের সভায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আইএএস অফিসারদের ক্ষেত্রেও তাঁরা যে রাজ্যের ক্যাডার হন, সেই রাজ্যের মাতৃভাষা শিখে তাঁদেরকে পরীক্ষায় বসতে হয় এবং বাধ্যতামূলকভাবে তাতে পাস করতে হয়। রাজ্য সরকার পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা বানাতে বলেছিল। সেই প্রস্তাবনার ভিত্তিতে গত ২৫ মার্চ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে ২০২৪ থেকেই ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় একটি বিষয় হিসেবে বাংলা ভাষার পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক। বিকল্প হিসাবে নেওয়া যাবে একমাত্র নেপালি ভাষা। বিরোধী দলনেতার এই আন্দোলনের হুমকিকে ওয়াকিবহাল মহল সস্তার রাজনীতি হিসেবে দেখছে।