অর্ণব আইচ: প্রেম নিয়ে টানাপোড়েন না কি ‘এনকাউন্টার’এর কাল্পনিক ভয় থেকে মানসিক অবসাদ? শুক্রবার পার্কসার্কাসের (Park Circus) কাছে বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে লোয়ার রেঞ্জে ডিউটি এসএলআর রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে বাইক আরোহী যুবতী রিমা সিংকে খুন করেন কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল চড়ুপ লেপচা। এর পর গুলি চালিয়ে নিজেই আত্মঘাতী হন তিনি। গুলিতে আহত হন কলিন্স লেনের বসির আলম। অল্প আহত হন শরফরাজ।
কিয়স্কে ডিউটি করার সময়ই একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পরই চা খেতে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালান। তাঁর মোবাইলটি লক থাকায় সেটি ফরেনসিকে পাঠানো হবে। তাঁর কললিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সময় ফোনে কোনও বান্ধবীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরই কি তিনি উতলা হয়ে ওঠেন, এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে। এই ব্যাপারে লেপচা পরিবার ও ওই যুবতীর সঙ্গে পুলিশ কথা বলবে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় হেরে শৃঙ্খলার প্রশ্নে কড়া কংগ্রেস, বরখাস্ত ক্রস ভোটিংয়ে অভিযুক্ত বিধায়ক]
সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে, শুক্রবার লোয়ার রেঞ্জে গুলি চালানো শুরু করতে আতঙ্কে পালান বাসিন্দারা। দুপুর ২টো ২৭ মিনিটে প্রায় ১৫ মিটার দূর থেকে গুলি চালান লেপচা। ‘ব্রাশ ফায়ার’এর একটি গুলি বাইকের পিছনে বসা রিমা সিংয়ের হেলমেট হয়ে গলার বাঁ পাশে লেগে অন্যদিক থেকে বেরিয়ে যায়। হেলমেট রাস্তায় ছিটকে পড়ে। ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে, গুলিতে হাড় ভেঙে ছিটকে আরও দু’টি ছিদ্রের সৃষ্টি করে গলায়। রাস্তায় পড়ে যান রিমা। ওই বাইকটি চালাচ্ছিলেন বসির। তাঁর পিঠের ডানদিকে গুলি লাগে। ওই অবস্থায় তিনি বাইক চালিয়ে পার্ক সার্কাসে চলে যান। এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে তাঁর অস্ত্রোপচার হচ্ছে। পুলিশ জেনেছে, মোট ১১ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল। লেপচার কাছে থাকা ৪০ রাউন্ড গুলির মধ্যে ২০ রাউন্ড ছিল দু’টি ম্যাগাজিনে। তিনটি পয়েন্টে পর পর গুলি চালিয়ে একটি ম্যাগাজিনের দশ রাউন্ড বুলেট শেষ করে ফেলেন তিনি। এর মধ্যে একটি রাস্তার মোড়ের কাছে শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এর পর নতুন ম্যাগাজিনের প্রথম গুলিটি দিয়েই আত্মহত্যা করেন তিনি। থুতনি ও গলার মধ্যে দিয়ে সেই গুলি মাথা ফুটো করে বেরিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, এক বছর আগে লেপচা কলকাতার চাকরিতে যোগ দেন। গুলি চালাতে দক্ষ হওয়ার কারণে তিনি সুযোগ পান এসটিএফে। উত্তরবঙ্গে একটি কাজে সফল হতে পারেননি। এর পর তাঁর মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাল না জানার ফলে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন না। ক্রমে তাঁর মানসিক সমস্যা হতে থাকে। মনে করতে থাকেন, তাঁকে এনকাউন্টার করে বা গুলি চালিয়ে খুনের চেষ্টা হচ্ছে। মাস তিনেক আগে নদিয়ায় একটি তল্লাশিতে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় সহকর্মীরা তাঁকে এনকাউন্টার করার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশের গাড়ি থেকে পালিয়ে ফেসবুক লাইভ করতে শুরু করেন। তাঁকে লালবাজারে নিয়ে আসার পর তিনি দেওয়ালে মাথা ঠোকেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেও পালান। ফের তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
[আরও পড়ুন: নূপুর শর্মার সমর্থনে পোস্ট করে বেলডাঙায় ধৃত কলেজ ছাত্রী, উত্তেজনা সামাল দিতে বন্ধ ইন্টারনেট]
মানসিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দশ দিনের ছুটির পর তাঁকে ট্রাফিকে বদলি করা হয়। সেখানেও অস্বাভাবিক আচরণ করার ফলে তাঁকে গত মাসের শেষে বদলি করা হয় পঞ্চম ব্যাটালিয়নে। কিছুদিন অস্ত্র ছাড়াই ডিউটি করছিলেন। এর পর দশদিনের ছুটি সেরে ফিরে আসার পর শুক্রবারই অস্ত্র সহ তাঁকে ডিউটি দেওয়া হয়। শনিবার ময়নাতদন্তের পর হাওড়ার রিমা সিংয়ের গুলিবিদ্ধ দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। কালিম্পং থেকে আত্মীয়রা আসার পর চড়ুপ লেপচার দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।