সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০০ বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হয়েছিল দেশ। কত বিপ্লবীর রক্তে রাঙানো বন্দিশালা চুরমার হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক দিনে। বলে দিতে হয় না, সেই দিনটা ১৫ আগস্ট (15th August), সালটা অবধারিত ১৯৪৭। ৭৬ বছর আগের কাহিনি। দেশভাগের বিষণ্ণ সিদ্ধান্তের বদলে এসেছিল বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতা (Independence of India)। মধ্যরাতে আক্ষরিক অর্থেই যুগান্তকারী ভাষণ দিয়েছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। যে ভাষণের পোশাকি নাম ‘ট্রিস্ট উইথ ডেসটিনি’। প্রশ্ন হল, ১৫ আগস্টই কেন? এই দিনটিকেই কেন বেছে নেওয়া হল?
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট কিন্তু পতাকা উত্তলন করেননি নেহরু। লোকসভা সচিবালয়ের একটি গবেষণা পত্র অনুসারে, ১৬ আগস্ট লাল কেল্লা থেকে পতাকা উত্তোলন করেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত ভাগ, অর্থাৎ কিনা ব়্যাডক্লিপ লাইনও কিন্তু ১৫ আগস্টের আগাভাগে কিংবা ১৫ আগস্টে দিনটিতে স্থির হয়নি। বরং শেষ পর্যন্ত তা নির্ধারণ হয় ১৭ আগস্ট। জেনে রাখা ভাল, ভারতের স্বাধীনতার অন্যতম স্থপতি মহাত্মা গান্ধী দেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশ নেননি। কেন? যেহেতু দেশভাগকে কেন্দ্র করে নোয়াখালিতে তখন দাঙ্গা চলছে। সেই সাম্প্রদায়িক হিংসা রুখতে উপবাস করেন গান্ধী। কিন্তু ১৫ আগস্ট কীভাব নির্ধারণ হল? তার সঙ্গে কি ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল মাউন্ট ব্যাটেনের যোগ রয়েছে?
[আরও পড়ুন: স্বাধীনতার উৎসবে শামিল হতে চাননি, ১৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন গান্ধী?]
১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে ভারতের স্বাধীনতা বিল পেশ করা হয়েছিল। এই বিলে ভারত ভাগ ও পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিলটি ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই গৃহীত হয়। অন্যদিকে ১৪ আগস্ট দেশভাগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীন পাকিস্তান ঘোষণা করেন মহম্মদ আলি জিন্না। এর পরেই ১৫ আগস্ট দিনটিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। কেন ১৫ আগস্ট, এই বিষয়ে একাধিক মত রয়েছে।
[আরও পড়ুন: মাত্র কয়েকটা উপাদানেই তৈরি হয়ে যাবে ‘তেরঙ্গা লস্যি’, স্বাধীনতা দিবসে চেখে দেখুন]
কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, সি রাজাগোপালচারির পরামর্শে মাউন্টব্যাটেন ভারতের স্বাধীনতার জন্য ১৫ আগস্ট দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন। যদিও শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ১৯৪৮-এর ৩০ জুন দিনটিকে ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু রাজাগোপালচারির পরামর্শ গ্রহণ করেন মাউন্টব্যাটেন। কিছু ইতিহাসবিদের দাবি, ১৫ আগস্ট তারিখটিকে শুভ বলে বিবেচনা করেছিলেন মাউন্টব্যাটেন। কেন? যেহেতু হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে ৬ ও ৯ আগস্ট পরমাণু বোমার ধ্বংসলীলার পর ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করেছিল। অবসান হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। সত্যিই তো, মানব সভ্যতার অন্যতম কলঙ্কিত অধ্যয় ভয়ংকর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যেদিন তা শেষ হয়েছিল, তার চেয়ে ভাল দিন আর কী হতে পারে!