অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: স্বামীকে ছেড়ে যাঁর কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই প্রেমিকের সঙ্গও ত্যাগ করে তৃতীয়জনের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন। আর সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন স্বামী। পথের কাঁটা সরাতে তাই হত্যাকাণ্ড ঘটাল স্ত্রী। সঙ্গ দিল প্রথম পক্ষের নাবালিকা কন্যা এবং প্রেমিক। হাওড়ার (Howrah) গোলাবাড়িতে যুবক খুনের তদন্তে নেমে পরতে পরতে জটিলতার নমুনায় তাজ্জব পুলিশও। গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্ত্রীকে।
স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গিয়েছিলেন স্বামী। এমনকী, স্ত্রী যে প্রেমিককে বিয়ে করে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাও টের পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাতেই খুন হতে হল শ্রমণ সিং নামে হাওড়ায় ঘুসুড়ির বছর চল্লিশের যুবককে। শুক্রবার রাতে তাঁকে খুনের পর একটি বস্তায় ভরে গোলাবাড়ির চালপট্টিতে গঙ্গার ঘাটের কাছে ফেলে দেওয়া হয়। শনিবার সকালে বস্তাবন্দি দেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। তাঁরাই খবর দেন গোলাবাড়ি থানায়। পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে তদন্তে নামে।
[আরও পড়ুন: পাচারের আগেই গার্ডেনরিচ থেকে উদ্ধার ৯০টি তাজা কার্তুজ, গ্রেপ্তার ১]
তদন্তে নামার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয় পুলিশের কাছে। এমন হত্যাকাণ্ডের পরতে পরতে রহস্যের জট খুলতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় দুঁদে গোয়েন্দাদেরও। তাঁরা জানতে পারেন, উত্তর হাওড়ার ঘুসুড়ির কুলি লেনের ফ্ল্যাটে থাকতেন শ্রমণ, তাঁর স্ত্রী পিঙ্কি ও পিঙ্কির প্রথম পক্ষের নাবালিকা মেয়ে। ওই ফ্ল্যাটেই ১ জানুয়ারি রাতে খুন করা হয় শ্রমণকে। জানা যায়, পিঙ্কি তাঁর প্রেমিক আমনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রমণকে খুন করে। রবিবার সকালে পুলিশ শ্রমণের স্ত্রী পিঙ্কিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার করা হয় তার নাবালিকা মেয়ে ও আমন গুপ্তা নামে প্রেমিককেও। সোমবার এদের হাওড়া আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: কোভিড টেস্টে পাশ করলে তবেই গঙ্গাসাগরের ট্রেনে উঠতে পারবেন তীর্থযাত্রীরা]
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি নর্থ অনুপম সিং জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের (Extra marital affair) কারণে পিঙ্কির সঙ্গে শ্রমণ সিংয়ের পারিবারিক অশান্তি হত। তার জেরেই শেষপর্যন্ত শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় শ্রমণকে। এই খুনে তিনজনই যুক্ত। তবে কে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। আরও জানা গিয়েছে, বছরের প্রথম দিন শ্রমণের ফ্ল্যাটে পার্টি চলাকালীন তাঁকে খুন করা হয়। তারপর বস্তাবন্দি করে দেহটি আমন ও পিঙ্কির নাবালিকা মেয়ে বাইকে করে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার ঘাটে ফেলে দেয়।
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, পিঙ্কির বর্তমান প্রেমিক আমন গুপ্তার বাড়ি গোলাবাড়ির ডবসন রোডে। শ্রমণ ও আমন দু’জনেই বিহার থেকে এসে হাওড়ায় দিনমজুরের কাজ করতেন। সেই সূত্রেই শ্রমণের স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় আমনের। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শ্রমণ সিংয়ের স্ত্রী পিঙ্কির প্রথম বিয়ের পর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার শ্রমণকে বিয়ে করে সে। বছরখানেক আগে পিঙ্কির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় আমন গুপ্তার। সেই সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌঁছয় যে সম্প্রতি আমন স্থির করে, সে পিঙ্কিকে বিয়ে করবে। আমনের এই ইচ্ছায় সায় দেয় পিঙ্কি ও তার আগের পক্ষের নাবালিকা মেয়েও। আর এই বিয়ের কথাই জেনে ফেলেছিলেন শ্রমণ। তাই শেষপর্যন্ত শ্রমণকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে পিঙ্কি ও আমন। তিনজন মিলে নিঁখুত ছক কষে হত্যাকাণ্ড ঘটালেও শেষরক্ষা হল না, পুলিশের জালে ধরা পড়তেই হল তিনজনকে।