স্টাফ রিপোর্টার: বিতর্কিত শিল্পপতি পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে জেশপ অগ্নিকাণ্ড এবং চুরির অভিযোগে দমকল ও পুলিশের তরফে করা দু’টি এফআইআরের ভিত্তিতে মামলা শুরু করল রাজ্য সরকার৷ ঘটনার জেরে বুধবারই কারখানা সংলগ্ন এলাকা থেকে যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল চুরির ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷
জেরার মুখে এদিন ধৃতরা স্বীকার করেছে, কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই দফায় দফায় জেশপ কারখানার ভিতর থেকে কাঁচামাল ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি করা হয়েছে৷ এমনকী, সোমবার রাতে পাঁচটি আলাদা জায়গায় একইসঙ্গে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের পিছনেও কারখানার শীর্ষ কর্তৃপক্ষের পূর্ণ মদত ছিল৷ ধৃতদের এই চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তির পরই এদিন দুপুরে দমদম থানায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জেশপের মালিক বিতর্কিত শিল্পপতি পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়৷ অগ্নিসংযোগ ও চুরির অভিযোগে রুইয়ার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলাও শুরু হয়েছে৷ কিন্তু যেহেতু সিআইডি পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তাই পবন রুইয়া-সহ জেশপ ও ডানলপের শীর্ষ কর্তাদের জেরার লক্ষ্যে শীঘ্রই ভবানীভবনে সিআইডি দফতরে তলব করা হচ্ছে৷ তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে কারখানার একাধিক শীর্ষ কর্তাকে গ্রেফতার করাও হতে পারে বলে এদিন ফের ইঙ্গিত দিয়েছে সিআইডি৷
পরিস্থিতির চাপে পড়ে এবং গ্রেফতার হতে পারেন অনুমান করে এদিন রাত দশটা নাগাদ দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পর্ণশ্রীর বাড়িতে দেখা করতে যান জেশপ মালিক৷ মিনিট কয়েকের মধ্যে বেরিয়ে এলেও মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি তিনি৷ অবশ্য পরে দমকলমন্ত্রী বলেন, “আমি একজন জনপ্রতিনিধি৷ আমার কাছে যে কেউ আসতে পারেন৷ আমার কাছে ভগবানও আসে, শয়তানও আসে৷ রুইয়াকে ভগবান বা শয়তান কোনওটাই ভাবছি না৷ স্রেফ ভদ্রতার খাতিরে দেখা করেছি রুইয়ার সঙ্গে৷ কিন্তু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, আমিই জেশপের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে এফআইআর করতে নির্দেশ দিয়েছি৷ ফরেনসিক তদন্ত চলছে৷ সব রিপোর্টই কোর্টে পেশ হবে৷ আর অন্তর্ঘাত নিয়ে সিআইডি তদন্ত করছে৷ তাই কোনও কথা শোনার মতো পরিস্থিতি এখন আর নেই৷ যা বলার আদালতে বলতে হবে৷”
ওয়াগন তৈরির বরাত পাওয়া জেশপকে প্রায় তিন বছর আগে ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু সেই ওয়াগন বানিয়ে সরবরাহ করা দূরের কথা, বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ ফেরত দেয়নি রুইয়ার জেশপ৷ বাধ্য হয়ে গত জানুয়ারি থেকে একাধিকবার সমস্ত সরবরাহ করা যন্ত্রাংশ ফেরত চায় রেল৷ কিন্তু তদন্তে নেমে সিআইডি এদিন জেনেছে, ৮০ কোটি টাকার সেই কাঁচামালের পুরোটাই কারখানা থেকে লোপাট হয়েছে রুইয়ার ঘনিষ্ঠ কর্তাদের অঙ্গুলিহেলনে৷ কার্যত দিনে-দুপুরে চুরি হয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন এই কারখানার বেশ কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামাল৷ অথচ কলকাতা হাই কোর্ট এই চুরি বন্ধের লক্ষ্যে চারপাশে পাঁচিল তোলা এবং পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পবন রুইয়াকে নির্দেশ দিয়েছিল৷ এই পুলিশ পিকেট বসানোর খরচও জেশপ কর্তৃপক্ষর দেওয়ার কথা ছিল হাই কোর্টের রায়ে৷ রাজ্যের দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় এদিন ফের অভিযোগ করে বলেন, “হাই কোর্টের কোনও রায়ই মানেননি জেশপ কর্তারা৷ উল্টে রাজ্যের বিরুদ্ধে শিল্পবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং অন্তর্ঘাতে অংশ নিয়েছেন৷” বস্তুত মন্ত্রীর এই অভিযোগ যে পুরোপুরি সত্যি তার প্রমাণ মিলেছে পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে দমদম থানায় শুরু হওয়া মামলার ধারায়৷ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা শুরু হওয়ায় রুইয়া ও তাঁর অফিসারদের যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতারের সম্ভাবনাও রয়েছে৷
এদিন বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরি বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে জেশপে পৌঁছন৷ পরে কমিশনার বলেন, “যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ আর কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ কারখানা চত্বরের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷” ধৃতরা হলেন–মধ্যমগ্রামের পূর্ব রাজপুরের সুমিত ভট্টাচার্য, বিমানবন্দরের নারায়নপুর বটতলার পালান অধিকারী, দমদমের ছোটু রায় এবং মুর্শিদাবাদের লোকনাথগঞ্জের লালকাঁন্দিয়ার প্রশান্ত মণ্ডল৷ এই চারজন কারখানার যন্ত্রাংশ ও ভিতরের কাঁচামাল চুরি করত৷ আরও তিনজন চুরির মালপত্র বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে৷
অন্যদিকে হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানাতেও দেড় বছরে মোট দশবার মালপত্র চুরি নিয়ে পৃথক তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি৷ ডানলপের যন্ত্রাংশ ও মাল লোপাটের ঘটনাতেও বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম উঠে এসেছে৷ শীঘ্রই সেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে বলেই এদিন ডানলপে তদন্তে যাওয়া সিআইডি টিমের আধিকারিকরা এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
The post গ্রেফতার হবেন কি পবন রুইয়া? appeared first on Sangbad Pratidin.