ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের সব থেকে বড় বার্ষিক কর্মসূচি। একুশের একুশ একেবারে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। বিধানসভায় ল্যান্ডস্লাইড জয়ের পর এবার লক্ষ্য চব্বিশের দিল্লি। সেই চব্বিশকে লক্ষ্য করেই এবার সর্বভারতীয় স্তরে বার্তা দিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC leader Mamata Banerjee)। এবারের কর্মসূচিও ভারচুয়াল। এদিনই দলীয় সংবাদপত্রকে সাপ্তাহিক থেকে ‘দৈনিক’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী বুধবার দুপুরে কালীঘাটে দলীয় কার্যালয়ের সেই কর্মসূচি থেকেই কাগজের নতুন লোগো উদ্বোধন করবেন তৃণমূলনেত্রী। তার সঙ্গে সঙ্গেই সামনে আসবে নতুন সংস্করণের প্রথম দিনের ই-পেপার, অর্থাৎ কাগজের ডিজিটাল পাতা। কবে থেকে দৈনিক হিসাবে তা ছেপে বেরবে, মমতা নিজে তার ঘোষণা করবেন।
এবারের কর্মসূচির একটা অন্যতম আকষর্ণ ভিনরাজ্যে মমতার ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার। দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবের পাশাপাশি গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, অসম, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় তার সম্প্রচার হবে। গুজরাতের ৩২টি জেলায় ৫০টি স্ক্রিন বসানোর কথা হয়েছে। প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। তৃণমূল নেতৃত্বের কথায়, এবার বিধানসভা ভোটে বড় সাফল্যে পর স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের বাইরে নেত্রীর ভাষণ শুনতে চাইছেন অসংখ্য মানুষ। এছাড়া অবিজেপি রাজ্যে গিয়ে মমতার কর্মসূচি নিয়েও একপ্রস্থ আলোচনা সারা। একুশের কর্মসূচির ক’দিন পরই দিল্লি যাচ্ছেন মমতা। বাদল অধিবেশন চলছে এখন। ফলে এ সময় মমতাকে ঘিরে আলাদা আকর্ষণ তৈরি হবে। তিনি নিজেও জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। পাশাপাশি অবিজেপি দলগুলির নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠকের পরিকল্পনা সামনে এসেছে। ফলে হাইভোল্টেজ সফর। তার আগে দিল্লির উদ্দেশে মমতার বার্তা চূড়ান্ত উচ্ছ্বাস তৈরি করেছে কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে।
[আরও পড়ুন: ‘বাংলায় বিনিয়োগে Tata-কে স্বাগত’, বলছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়]
একই সঙ্গে স্যোশাল মিডিয়াতেও মমতার বার্তা শোনানোর উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। মাথায় রাখতে হবে প্রতিবার রাজ্যে বুথের সংখ্যা থাকে ৮০ হাজারের কাছাকাছি। এবারের ভোটে তা বেড়ে হয়েছে এক লক্ষ এক হাজারের কিছু বেশি। ফলে বুথপিছু ব্যবস্থাপনাও বেশি। তার সঙ্গে ফেসবুক, ইউটিউব মিলিয়ে নানা সোশ্যাল মাধ্যমে ভিউয়ারের সংখ্যার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লক্ষের মতো। এর মধ্যে আরও একটি বলে রাখার মতো। যে ‘খেলা হবে’ গান গোটা নির্বাচনে উন্মাদনা তৈরি করেছিল দলের মধ্যে, চব্বিশের লক্ষ্যে সেই গান এবার হিন্দিতে লিখছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য।
এর মধ্যেই দলের মুখপত্রের দৈনিক সংস্করণ শুরু করার কথা জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। রাজধানী হবে এই সংবাদপত্রের ফোকাস। পাঠক হিসাবে টার্গেট করা হবে গোটা দেশ তথা বিশ্বের বাঙালিদের। এ রাজ্যের পাশাপাশি থাকবে জেলার খবর, দলের প্রতিদিনের কর্মসূচি এবং তা নিয়ে খবর, প্রবন্ধ, দলের সাংসদ–বিধায়কদের লেখা। প্রতিদিন আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে থাকবে ফিচার পাতা। শনি ও রবিবার বিশেষ ক্রোড়পত্র। খেলার পাতাকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হবে। থাকবে দলের স্লোগান। এ প্রসঙ্গে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ এবং তাঁর ভাবনা সম্পর্কে সবাই জানতে চান। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এতরকম কাজ করছে, সেগুলো ইতিবাচকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিভাবকত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় সময়ের দাবিতে এই সংবাদপত্রের সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক রূপে আত্মপ্রকাশ ঘটবে।”
[আরও পড়ুন: Pegasus: আড়ি পাতা হয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোরের ফোনেও, দাবি রিপোর্টে]
এদিকে ২১ জুলাই তৃণমূলের পালটা কর্মসূচি নিতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি। ওইদিন বিভিন্ন জেলা পার্টি অফিসে কোভিডবিধি মেনে ছোট সভা করবে গেরুয়া শিবির। রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা, ভ্যাকসিন ইস্যু-সহ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার হবেন বিজেপি নেতারা। প্রতি জেলা পার্টি অফিসে অনুষ্ঠিত ওই সভা ভারচুয়ালি জেলার দলের নেতা-কর্মীরা শুনতে পারবেন। দলীয় সূত্রে আরও খবর, ২১ জুলাই রাজভবনেও যাওয়ার কথা রয়েছে বিজেপি বিধায়কদের। শাসক বিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হবেন পদ্ম শিবিরের সমস্ত বিধায়ক। তৃণমূলের পালটা এই কর্মসূচির কথা রাজ্য বিজেপির তরফে এখনও জানানো হয়নি। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে কর্মসূচির ঘোষণা করা হতে পারে দলের তরফে।