সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৭৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা! সিকিমের ২১.১৪% পড়ছে যার জিম্মায়! আরেক দিকে শুরু হয়েছে নেপালের সীমানা।
Advertisement
তাকে ঘিরে রেখেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, নরসিংহ, পাদিম, কাবুর, নেপাল, টেন্ট এবং এরকম আরও অনেক শৈলশৃঙ্গ। তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে ১৮টি হিমপ্রবাহ! যার মধ্যে রীতিমতো ডাকসাইটে জেমু; যা ৩০০ মিটার পুরু এবং ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ! এছাড়া ওক, পাইন, ফার, বার্চের শ্যামল সামিয়ানা তো আছেই!
কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক। পাহাড়চূড়ায় আনন্দের যা অন্য নাম।
জাতীয় উদ্যান খুব স্বাভাবিক ভাবেই ধরে রাখে দেশের জাতিগত বৈশিষ্ট্যকে। সিকিমের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু, বিস্ময় এখানে থমকে থাকে প্রতি পদে। এতটাই ঘন ঘন পরিবর্তিত হয় এই উদ্যানে প্রকৃতির রূপ যে হতবাক হয়ে যেতে হয়। কখনও দেখা যায় সবুজের সমারোহ, কখনও বা রুক্ষ পাথুরে এলাকা! কখনও বা মাথার উপরে নীল আকাশ নিয়ে বয়ে চলে সাদা হিমবাহ! পাহাড়কে যদি চিনতে হয় কোনও ঝুঁকি ছাড়াই, যদি বিন্দুতে বুঝে নিতে হয় তার সিন্ধুসমান রূপমাধুরী, তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক ছাড়া অন্য গন্তব্য মেলা ভার!
তথ্য বলছে, সিকিমের এই জাতীয় উদ্যান তার ফ্লোরা আর ফনা- দুইয়ের জন্যই সমানভাবেই প্রসিদ্ধ। পাহাড়ে যেমন পাদদেশে দেখা যায় ঘন সবুজের সমারোহ, কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কেও তাই। ওক, ফার, পাইন, বার্চ, মেপল- পার্বত্য মহীরূহদের যেমন খুঁজে পাওয়া যাবে এই উদ্যানে, তেমনই পাওয়া যাবে নানা ওষধি আর ভেষজও। দেখা যাবে ফুলের সমারোহও। উদ্ভিদপ্রেমীদের কাছে তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক সাক্ষাৎ স্বর্গ।
পশুপ্রেমীদেরও যদিও হতাশ হওয়ার কারণ নেই। ১৭৮৪ বর্গ কিলোমিটার যে উদ্যানের পরিধি, যে উদ্যান রূপবৈচিত্র্যে পাহাড়েরই সমতুল, তার পশুজীবন বা ফনাও বৈচিত্র্যময় হতে বাধ্য। ক্লাউডেড লেপার্ড, স্নো লেপার্ড, ওয়াইল্ড ডগ, স্লথ বিয়ার, নীল ভেড়া, কস্তূরী মৃগ, লাল পান্ডা- তালিকা অন্তহীন। রয়েছে ব়্যাটল স্নেক, রাসেল ভাইপারের মতো ডাকসাইটে বিষধরও! সাধে কী আর এই উদ্যান ইউনেস্কোর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে!
আর এই সবের মাঝেই থাকবেন আপনি। প্রকৃতি আর পশুজগতে ঘেরা এই পৃথিবী যেমন মানুষ ছাড়া অসম্পূর্ণ, তেমনই এই উদ্যান সম্পূর্ণতা পাবে আপনার পায়ের চিহ্ন নিয়ে। উদার নীল আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে যখন দেখবেন শৈলশৃঙ্গের অপার রূপরাশি, যখন সবুজে-ধূসরে হারিয়ে যাবে মন, তখনই খুঁজে পাবেন নিজেকে। বুঝতে পারবেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কে আসার সিদ্ধান্তটা একদমই ঠিকঠাক ছিল।
কী ভাবে যাবেন: ট্রেন এলে নামতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। সেখান থেকে প্রথমে আসুন গ্যাংটকে। গ্যাংটক থেকে ঘণ্টা চারেকের দূরত্বে, ১২২ কিলোমিটার গাড়িতে অতিক্রম করে চলে আসুন কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কে। এছাড়াও এই উদ্যানের দুটি প্রবেশদ্বার আছে। একটি গ্যাংটক থেকে ১২৩ কিলোমিটার দূরে, ঘণ্টা পাঁচেকের সময়সীমা পেরিয়ে ইয়ুকসম। অন্যটি চুংথাং; গ্যাংটক থেকে যার দূরত্ব ৮১ কিলোমিটার। পথ দুর্গম বলে সময় লাগে ঘণ্টা চারেক মতো!
আর বিমানে এলে নামতে হবে বাগডোগরা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে গাড়িতে করে গ্যাংটক। তার পর বেছে নিন যে কোনও একটি প্রবেশদ্বারের পথ।
কোথায় থাকবেন: গ্যাংটকে থাকলেই ভাল হয়। অনেক হোটেলের মধ্যে থেকে বেছে নিন আপনার পকেটসই ঘর।
The post পর্বতশৃঙ্গ, অরণ্য আর হিমবাহের অপরূপ মিশেল যেখানে appeared first on Sangbad Pratidin.