অর্ণব আইচ: যৌন নির্যাতনের শিকার যুবতী। আর তাতেই যে তাঁর শরীরে মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে বলেই ধারণা পুলিশের। আধিকারিকদের অভিমত, সম্ভবত তিনি মারণ রোগে আক্রান্ত। তা জানতে পেরেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় যুবতীকে। আর তার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ওই যুবতী। শহরের ফুটপাথেই তাঁর জায়গা হয়। ১০০ ডায়ালে ফোন পেয়ে ওই অবস্থা থেকেই তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। এবার পুলিশের সহায়তায় আদালতের নির্দেশেই ওই যুবতীর জায়গা হচ্ছে পাভলভ হাসপাতালে (Pavlov Hospital)।
যুবতীর পোশাক ছিল অবিন্যস্ত। চোখে, মুখে স্পষ্ট ভয়ের চিহ্ন। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রাস্তায় রাস্তায়। মধ্য কলকাতার (Kolkata) ফুটপাথ অথবা কোনও শেডের তলায় এক কোণে খুঁজছিলেন আশ্রয়। কখনও বা খাবার চেয়ে দোকানে দোকানে ঘুরছিলেন রুগ্ন চেহারার ওই মহিলা। সম্প্রতি মধ্য কলকাতার ক্রুকেড লেনের ফুটপাথে এসে থাকতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু অসুস্থ ওই যুবতীর উঠে দাঁড়ানোরও ক্ষমতা ছিল না। কেউ মুখের সামনে খাবার না তুলে দিলে জুটছিল না খাবারও। তার উপর ছিল একাকী যুবতীর সম্মান হারানোর ভয়ও।
[আরও পডুন: ছাগ পালনেই চলত সংসার, ধারে লটারির টিকিট কেটে কোটিপতি বর্ধমানের যুবক!]
তা চোখে পড়েছিল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার। তাঁদের মধ্যেই একজন ফোন করেন ১০০ ডায়ালে। ওই যুবতীকে উদ্ধার করার আবেদন জানান। লালবাজারের (Lalbazar) কাছ থেকে খবর যায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় (Hair Street PS)। সঙ্গে সঙ্গেই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মহিলা পুলিশের সহায়তায় হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ আধিকারিকরা এসে ক্রুকেড লেনের ফুটপাথ থেকে উদ্ধার করেন যুবতীকে। তাঁকে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তারা নিজেদের কাছে রেখে চিকিৎসা শুরু করেন। তিনি এতটাই দুর্বল যে, নিজের নামও বলতে পারেননি।
তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখেই রক্ত পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে জানা যায় যে, তিনি এইচআইভি (HIV) রোগে আক্রান্ত। তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমে আরও অবনতি হচ্ছে। তার উপর ক্রমশ অবনতি হচ্ছে মানসিক পরিস্থিতিও। সেই কারণেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের চিকিৎসকরাই যুবতীকে পাভলভে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানান। সেইমতো হেয়ার স্ট্রিট থানার আধিকারিকরা ব্যাঙ্কশাল আদালতে এই ব্যাপারে আবেদন জানান। তা মঞ্জুর করে আদালত। তারই ভিত্তিতে যুবতীকে পাভলভে রেখে আসা হয়। মারণ রোগে আক্রান্ত ওই রোগিনীর আলাদাভাবেই চিকিৎসা হচ্ছে।
[আরও পডুন: রাজ্যের ৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ রাজ্যপালের, ফের রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত!]
এদিকে, একই সঙ্গে পুলিশ ওই মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা করছে। এই ব্যাপারে পুলিশ সোশাল মিডিয়ারও (Social Media) সাহায্য নিতে পারে। ওই মহিলা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণেই তাঁর শরীরে মারণ রোগ বাসা বাঁধে বলে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত। চিকিৎসকরা যুবতীর সঙ্গে কথা বললে তাঁর পরিচয় ও তাঁর উপর কী ধরনের অত্যাচার হয়েছিল, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।