সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করতে আসছেন মা। সুদূর মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ছৌ নৃত্যের (Chhau Dance) এই থিমে ‘রক্তাসুর বধ’ পালা করে মঞ্চ কাঁপাল পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল বলরামপুরের মালডির মিতালি মহিলা ছৌ দল। এই দলের দুই শিল্পী বোন দুর্গা ও কালী সেজে মাতিয়ে দেন ভূপালের জনজাতীয় সংগ্রাহালয়। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে মধ্যপ্রদেশ জনজাতীয় সংগ্রহালয়ের আয়োজনে ভোপালের ‘সম্ভাবনা’ নামে একটি অনুষ্ঠানে গত ৫ আগস্ট থেকে নানান সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চলছে। শনিবার শেষ দিনে পুরুলিয়ার প্রখ্যাত ছৌ শিল্পী জগন্নাথ চৌধুরীর মিতালী মহিলা ছৌ দল ‘রক্তাসুর বধ’ পালায় ওই নৃত্য তুলে ধরে।
সোমবার রাতে দলটি পুরুলিয়ায় ফেরে। শিল্পীর কথায়, “২০১২ সাল থেকে এই মহিলা ছৌ দল পুরুলিয়া ছাড়াও বাংলা, ঝাড়খণ্ড-সহ একাধিক রাজ্য এমনকী বিদেশেও এই দলের শিল্পীরা তাঁদের নাচ তুলে ধরে নাম কুড়িয়েছে। ভোপালের অনুষ্ঠানেও একইভাবে নজর কাড়ল।” পালায় দুর্গা সেজেছিলেন মৌসুমী চৌধুরী। আর কালীর সাজে ছিলেন তাঁরই বোন শ্যামলী চৌধুরী। ৪৫ মিনিটের এই পালায় মা উমার আগমনীর বার্তা ফুটে ওঠে।
[আরও পড়ুন: ইডির বিরুদ্ধে ফাইল ডাউনলোডের অভিযোগ, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কর্তাকে ডাকল লালবাজার]
দুর্গার বেশে ছৌ নৃত্য করা মৌসুমী বলেন, “মহিষাসুরমর্দিনী, রক্তাসুর বধের মতো পালা করলে মনে হয় যেন পুজো একেবারে দোরগোড়ায়। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। শনিবার সন্ধ্যায় যখন দুর্গার বেশে মঞ্চে নাচ করছিলাম তখন মনে হচ্ছিল পুজো তো আর দেরি নেই। এটা ভাবতে ভাবতেই যেন ওই পালার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে সেরা নৃত্যটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অনুষ্ঠান শেষে সবার অভিনন্দনে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।”
পুরুলিয়ার মহিলা ছৌ দল যেভাবে দেশ-বিদেশের মঞ্চ কাঁপাচ্ছে তাতে এই শিল্পকলার আরও প্রসার ঘটছে। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় বীররসের প্রথম মহিলা ছৌ শিল্পী এই মৌসুমী। দিদির হাত ধরেই শ্যামলী ছৌ নাচতে শুরু করেন। এখন ওই গ্রামের বহু কিশোরী এমনকী বালিকারাও এই শিল্পকলায় সামিল হয়েছেন। তবে মৌসুমীকে এই জায়গায় পৌঁছাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। মেয়ে হয়ে বীররসের ছৌ নাচ করায় নানান গঞ্জনা, অপমান সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু সেইসব অপমান কানে না তুলে, গায়ে না মেখে দুর্গা সেজে শুধুই নাচ করে গিয়েছেন।