সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুদিনের সফরে লাওসে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২১তম আসিয়ান-ভারত শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সেদেশের রাজধানী ভিয়েনতিয়ানে পা রাখেন তিনি। এদিন সামিটে যোগ দিয়ে মোদি বলেন, একবিংশ শতাব্দী ভারতেরই। এই শতাব্দী আসিয়ান দেশগুলোর। পাশাপাশি তিনি জোর দেন ভারতের ‘অ্যাক্ট -ইস্ট পলিসি’র উপর। তাঁর মতে, এই নীতি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্লেষকদের মতে, চিন নজরে রেখে ‘অ্যাক্ট -ইস্ট পলিসি’ গুরুত্ব এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তুলে ধরেছেন নমো।
আসিয়ান-ভারত শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ১৯তম পূর্ব এশিয়া সম্মেলনও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে থাকবেন মোদি। তাঁকে লাওসে আমন্ত্রণ জানান আসিয়ান গোষ্ঠীর বর্তমান সভাপতি তথা লাওসের প্রধানমন্ত্রী সোনেক্সে সিফানডোন। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই এদিন ভিয়েনতিয়ানে যান নমো। এএনআই সূত্রে খবর, ভারতের অবদানের কথা তুলে ধরে মোদি বলেন, "আমি ভারতের অ্যাক্ট-ইস্ট নীতি ঘোষণা করেছিলাম। গত দশকে, এই নীতি ভারত ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এই জোটকে নতুন শক্তি, দিক নির্দেশ এবং গতি দিয়েছে। আসিয়ানকে প্রাধান্য দিয়ে ১৯৯১ সালে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভ চালু করি। গত বছর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সামুদ্রিক মহড়া শুরু হয়। গত ১০ বছরে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আজ, ৭টি আসিয়ান দেশের সঙ্গে সরাসরি বিমানপথে যোগাযোগ রয়েছে ভারতের। শীঘ্রই ব্রুনেইয়েও ফ্লাইট চালু হবে। আমরা তিমুর লেস্টে নতুন দূতাবাস খুলেছি। সিঙ্গাপুর ছিল আসিয়ানের প্রথম দেশ যার সঙ্গে আমরা ফিনটেক সংযোগ স্থাপন করেছি এবং এখন এটি অন্যান্য দেশের সঙ্গেও হতে চলেছে।"
আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্কের কথা জানিয়ে মোদি বলেন, "আমরা শান্তিপ্রিয় দেশ। একে অপরের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। আমরা আমাদের নাগরিকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি যে, একবিংশ শতাব্দী হল ভারতের। এই শতাব্দী আসিয়ান দেশগুলোর। আজ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় সংঘাত ও উত্তেজনা চলছে। তাই ভারত ও আসিয়ানের বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।" এদিকে, তিন বছর হতে চললেও রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামেনি রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে। অন্যদিকে, এক বছর পূর্ণ হয়েছে গাজা যুদ্ধের। হামাস নিধনে গোটা গাজা ভূখণ্ড গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইজরায়েল। এখন সম্মুখ সমরে ইজরায়েল-ইরান। লেবাননেও হেজবোল্লার বিরুদ্ধে সংঘাত শুরু হয়েছে তেল আভিভের। ফলে এই অস্থির পরিস্থিতিতে আসিয়ান-ভারত সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, নজরে রাখা হয়েছে চিনকেও।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম নিয়ে গঠিত আসিয়ান। ভারত এই গোষ্ঠীর আলোচক দেশ বা পরামর্শদাতা। আর এদিকে, দক্ষিণ চিন সাগর ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে লালফৌজ দাদাগিরি চালাচ্ছে। কমিউনিস্ট দেশের এই আগ্রাসানে বিপন্ন মুক্তবাণিজ্য পথ। এছাড়া বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গা জোয়ারি করে ভারতের সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়েছে চিন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তাই এদিন ‘অ্যাক্ট -ইস্ট পলিসি’র কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মোদি বেজিংকেই বার্তা দিয়েছেন।