সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতে ফেরানো হচ্ছে ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অন্যতম চক্রী তাহাউর হুসেন রানাকে। আজ বুধবার সন্ধ্যে কিংবা গভীর রাতে বিশেষ বিমানে তাকে নিয়ে ফিরবে এনআইএ-র তদন্তকারী দল। ইতিমধ্যেই এই কুখ্যাত জঙ্গির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে দিল্লি ও মুম্বইয়ের দুটি জেল। কারাগারগুলোয় আঁটসাঁট করা হয়েছে নিরাপত্তা। রানার প্রত্যর্পণের বিষয়টির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পাশাপাশি রানার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা সেরে ফেলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসতেই বড় কূটনৈতিক জয় পায় ভারত। তাহাউর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ দেয় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। ভারত-মার্কিন বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি মেনে তাকে দিল্লির হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সিলমোহর দিয়েছিল আমেরিকার শীর্ষ আদালত। কিন্তু সেই রায়ের উপর জরুরিভিত্তিক স্থগিতাদেশ চেয়ে ফের আদালতে গিয়েছিল রানা। দাখিল করেছিল রিভিউ পিটিশান। কিন্তু লাভ হয়নি। গত ৭ এপ্রিল (সোমবার) পাক নাগরিক তথা কানাডার ব্যবসায়ীর আবেদন খারিজ করে দেয় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।
তারপরই শুরু হয় রানাকে ভারতে ফেরানোর প্রক্রিয়া। আমেরিকায় পৌঁছে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র বিশেষ দল। এনআইএ-র আইজি পদমর্যাদার অফিসার আশিস বাটরা, ডিআইজি মর্যাদার জয়া রায় এবং একজন ডেপুটি এসপি পদমর্যাদার অফিসার-সহ আরও তিন গোয়েন্দা অফিসার রয়েছেন সেই দলে। জানা গিয়েছে, এই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা। এদিকে, রানার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে মুম্বই ও দিল্লির দুটি জেলের হাই সিকিউরিটি ওয়ার্ড। যার নিরাপত্তা দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রথমে দিল্লিতে রানাকে জেরা করতে পারে এনআইএ। তাই তিহার জেলে একটি বিশেষ সেল প্রস্তুত করা হয়েছে। সেলের সঙ্গেই থাকছে বাথরুম। মনিটরে সেলে সর্বক্ষণ নজর রাখা হচ্ছে।
কে এই তাহাউর রানা?
২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে যে পাকিস্তানের জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল তাদের অন্যতম মদতদাতা ছিল এই রানা। হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী ছিল মার্কিন নাগরিক ডেভিল কোলম্যান হেডলি। রানা তার ঘনিষ্ঠ। প্রায় দেড় দশক ধরে এই অপরাধীকে হাতে পেতে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে ভারত। ২০১৩ সালে তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় আমেরিকার আদালত। ২০২০ সালে স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তাকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু ভারতের প্রত্যর্পণের আবেদনে খুনের মামলায় ফের তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ওই জঙ্গিকে দিল্লির হেফাজতে দিতে মার্কিন প্রশাসন আদালতে আবেদন করে। গত বছরের আগস্ট মাসে ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালত জানিয়ে দেয় রানা ভারতের কাছে প্রত্যর্পণযোগ্য। পালটা আবেদন করেছিল সে। কিন্তু কিছুই ধোপে টেকেনি না। অবশেষে ২৬/১১ হামলার বিচারের জন্য দেশে ফেরানো হচ্ছে রানাকে।