সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম ভলোদিমির জেলেনস্কি (Donald Trump-Volodymyr Zelenskyy Clash)! দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কাজিয়ায় সরগরম হোয়াইট হাউস। ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে এই তরজার আঁচ পড়েছে গোটা বিশ্বে। বিশেষ করে, শুক্রবার ওভাল অফিসে মার্কিন এবং ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের বাদানুবাদে বাক্য হারিয়ে ফেলেছে শঙ্কিত ইউরোপ।

দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের পর থেকেই সামরিকভাবে ইউরোপের রক্ষাকবচ আমেরিকা। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং স্ট্যালিনীয় সমাজতন্ত্রের হাত থেকে বাঁচতেই ১৯৪৯ সালে ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে তৈরি হয় নর্থ আটলান্টিক ট্রেটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো সামরিক জোট। বাকিটা ইতিহাস। তবে ওভাল অফিসে ট্রাম্প জমানা শুরু হতেই বহু পরিচিত কূটনীতির গতিপথ পালটে গিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ এবং রুশ নীতির ধারা। বদলের আশঙ্কা যে ছিল না, তা নয়। তবে ইউক্রেন প্রসঙ্গে যে এতটা ইউটার্ন নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প তা আঁচ করতে পারেননি ইউরোপীয় নীতি নির্ধারকরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের গতকাল দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কাজিয়ায় তারা শঙ্কিত, আতঙ্কিত এবং বাক্যহারা। মার্কিন রক্ষাকবচ উঠে গেলে ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে আগ্রাসী রাশিয়ার সঙ্গে কি আদৌ পেরে ওঠা যাবে, উঠছে প্রশ্ন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি। মূলত, আলোচনা হওয়ার কথা ছিল ইউক্রেনের খনিজ নিয়ে। গোড়া থেকেই এই চুক্তির পক্ষে জোর সওয়াল করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না বলে চুক্তি হবে না বলে অবস্থানে অনড় ছিলেন জেলেনেস্কি। ফলে পরিস্থিত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জেলেনস্কিকে নিশানা করেন ট্রাম্প। বলেন, "তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন আপনি। শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতেই হবে। তার জন্য কিছু আপসও করতে হবে, তবে তা খুব বেশি নয়। চুক্তিবদ্ধ না হলে আপনার সঙ্গে থাকবে না আমেরিকা। আপনাকে একাই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।" ট্রাম্পের এই ভাষ্যে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে খনিজ চুক্তি না করেই চলে যান জেলেনস্কি।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে ইউক্রেনের জনৈক আইনপ্রণেতা বলেন, "যা শুনলাম তাতে আমার চোখে জল আসছে।" রাশিয়ার কার্স্ক অঞ্চলে যু্দ্ধরত ইউক্রেনীয় সেনার এক অফিসার বলেন, "লজ্জার শান্তির চাইতে যুদ্ধই শ্রেয়।" অনেকেই আশঙ্কা করছেন, রাশিয়ার সঙ্গে গোপনে বোঝাপড়া সেরে ফেলেছেন ট্রাম্প। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দোনবাসের মতো ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলে খনিজ আহরণে ট্রাম্পকে কার্যত আমন্ত্রণ জানিয়েই রেখেছেন পুতিন। এই পরিস্থিতিতে কিয়েভের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে, স্পেন, লিথুয়ানিয়া, মলডোভা, সুইডেন, লাটভিয়া ও নরওয়ে। এক্স হ্যান্ডেলে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক লেখেন, 'ইউক্রেনের বন্ধুরা, মনে রাখবেন আপনারা একা নন।' কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। পাশে দাঁড়িয়েছে জার্মানি, ব্রিটেনও।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের প্রসঙ্গ তুলে ব্রিটেনের সিনিয়র কনজারভেটিভ নেতা রবার্ট জেনরিক এক্স হ্যান্ডলে লিখছেন, 'এই অবমাননাকর দৃশ্য দেখে বিরক্ত। ভাবছি উইনস্টন চার্চিল ওই ঘরে থাকলে কীভাবে ফেটে পড়তেন। উনি নিশ্চয়ই এই ঘটনা দেখে কবরে পাশ ফিরে শুচ্ছেন। ইউক্রেনের মানুষ জেলেনস্কির নেতৃত্বে পুতিনকে আটকে রেখেছে যুদ্ধ করে।'