সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে এবার প্রাক্তন আল কায়দা জঙ্গি! যুদ্ধজর্জর দেশটির রাশ ধরল কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী তথা যুদ্ধপতি আবু মহম্মদ আল জোলানি। ফলে, বাশার আল আসাদের পতনে 'সিরীয় বসন্ত' বা গণতন্ত্রের নবোদয়ের স্বপ্ন আপাতত খানখান বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রশ্নের মুখে দেশটির সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎও।

৫০ বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির ক্ষমতার রাশ ধরে রেখেছিল আসাদ পরিবার। ২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন বাশার আল আসাদ। কিন্তু জলঘোলা হতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব বসন্তের হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে একনায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। আসাদকে গদিচ্যুত করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিদ্রোহীদের যৌথমঞ্চ ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)। কুর্দ বাহিনী পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্বে আরম্ভ হয় এক অসম যুদ্ধ। লড়াইয়ে বিদ্রোহীদের সাহায্য করতে শুরু করে আমেরিকা। পাশাপাশি আসাদের হয়ে আসরে নামে ইরানের মদতপুষ্ট হেজবোল্লা, রাশিয়া।
সেই থেকেই গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত হতে শুরু করে সিরিয়া। শুরুর দিকে লড়াইয়ে অন্যতম প্রধান শহর আলেপ্পো হাতছাড়া হলেও, ২০১৬ সালে তা পুনরুদ্ধার করে আসাদ বাহিনী। তবে সময়ের সঙ্গে মার্কিন ও পশ্চিমের দেশগুলোর মদতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে জবরদস্ত পালটা মার দিতে শুরু করে বিদ্রোহীরা। এবারে তাদের নেতৃত্ব দেয় তাহরির আল শাম (এইচটিএস)। রাষ্ট্রসংঘ থেকে ইতিমধ্যেই জঙ্গি তকমা দেওয়া হয়েছে আল কায়দার এই শাখা সংগঠনটিকে। বহু লড়াই করেও এইচটিএসের কাছে টিকতে পারেনি আসাদ বাহিনী। ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় তারা। দামাস্কাসের মসজিদে গিয়ে জয় ঘোষণা করেন তাহরির আল শামের প্রধান আবু মহম্মদ আল জোলানি। ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালান গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদ।
গতকাল বুধবার আল আয়দার এই কুখ্যাত জঙ্গি জোলানি ওরফে আহমেদ আল শারাকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নেওয়া হয়। সিএনএন সূত্রে খবর, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীর মুখপাত্র হাসান আবদেল ঘানি জানান, "আমরা দেশের প্রধান হিসাবে কমান্ডার আহমেদ আল শারাকে বেছে নিয়েছি। তিনি সিরিয়ার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আপাতত তিনি একটি অস্থায়ী আইনসভা গঠন করবেন। যতদিন না স্থায়ী সংবিধান তৈরি হচ্ছে ততদিন এই আইনসভা দায়িত্ব পালন করবে।" ঘানি আরও জানান, "দেশের পুরনো সংবিধান আপাতত কার্যকর থাকছে না। সংসদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাক্তন সরকারের সেনাবাহিনী ও তাদের অন্যান্য সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।"
কে এই জোলানি? ২০ বছর বয়স থেকেই জেহাদি কার্যকলাপে হাত পাকায় জোলানি। নামে যুদ্ধের ময়াদানে। ২০০৩ সালে ইরাকে ঢুকে মার্কিন সেনার সঙ্গে লড়াইয়ে শামিল হয়। ধরা পড়লে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইরাকের কুখ্যাত কারাগার ক্যাম্প বুকায় বন্দি করে রাখা হয়। তবে সেই জেল থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ফিরে আসে জোলানি। তারপর তৎকালীন বাসাদ সরকারের বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু হয় তার। আর এই জোলানির মাথায় হাত ছিল ইসলামিক স্টেটের প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল বাগদাদির। এভাবেই শক্তি বৃদ্ধি হয় জোলানির। এরপর আল কায়দার সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাভাত-আল-নুসরা নামে এক জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ২০১৬ সালে আল কায়দার সঙ্গে জোট ভাঙে জোলানি। তার এই সংগঠনই পরে তাহরির আল শামের নাম নেয়। এখন এই জেহাদিই সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের গদিতে।