সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই ভোট হবে দেশে। এবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমস্টেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল এন্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) শীর্ষ সম্মেলনে গিয়েও নির্বাচন নিয়ে কথা বললেন ইউনুস। জানালেন, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা তাঁর সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। পাশাপাশি তিনি নারী-পুরুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সকলের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
শুক্রবার সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়, "আমি আমাদের জনগণকে আশ্বস্ত করেছি যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করব। যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন করা আমার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।" বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমাদের জনগণ একটি ন্যায়সংগত ও স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল, যেখানে প্রতিটি সাধারণ মানুষ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। দুঃখজনকভাবে গত ১৫ বছরে আমাদের জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ ক্রমাগত তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা সংকুচিত হতে দেখেছে। তারা রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয় ও নাগরিক অধিকারের অবমাননা প্রত্যক্ষ করেছে। সাধারণ জনগণ একটি নৃশংস স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রায় দু'হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই তরুণ। প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে ১১৮টি শিশু।"
এদিন ইউনুস আরও বলেন, "আমরা সুশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিষয়গুলোই আমাদের পরিকল্পিত সংস্কারের মূল লক্ষ্য। সরকার ইতিমধ্যে বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, যাতে জনগণের মালিকানা, জবাবদিহি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। আমরা সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছি। আমি নিজেই যার নেতৃত্ব দিচ্ছি এবং এতে ছয়টি কমিশনের প্রধানেরা রয়েছেন। এই কমিশনগুলো যে সুপারিশগুলো জমা দিয়েছে, তা পর্যালোচনা এবং গ্রহণ করার জন্য এ কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা যখন বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করছি, তখন আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে অবিচলভাবে কাজ চালিয়ে যাব। নারী হোক কিংবা জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুই হোক না কেন।"
গত বছরের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে পড়ুয়াদের একটি সংগঠন পথে নামে। জামাতের উসকানিতে তাদের সেই আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয়। ৫ আগস্ট গদি হারিয়ে হাসিনা দেশ ছাড়েন। ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। তারপর থেকে দেশে দাপাদাপি বাড়ে মৌলবাদীদের। সংখ্যালঘু নির্বাচন, খুন, ধর্ষণ লাগামছাড়া হারে বৃদ্ধি পায়। বিএনপি, জাতীয় পার্টির মতো একাধিক রাজনৈতিক দল দ্রুত ভোটের দাবি তোলে। কিন্তু ইউনুস এর আগে কখনই পরিষ্কারভাবে নির্বাচনের সময় জানাতে পারেননি। সবসময়ই ভোটের আগে দেশ সংস্কারের উপর জোর দিয়েছেন।
প্রথম থেকেই ছাত্রদের দাবি ছিল, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। ভোটের থেকেও তাঁরা মুজিবকন্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছিলেন। এদিকে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমাগত সরকারের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের সেনা। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ জামান হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এমন কিছু করবেন না যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হয় সেনা। অন্যদিকে, গণতন্ত্র রক্ষায় ভোটের দাবিতে আমেরিকা, ভারত, ব্রিটেনের মতো দেশও ঢাকার উপর চাপ বাড়াচ্ছিল। সব মিলিয়ে ঘরে বাইরে চাপে পড়েছিলেন ইউনুস। বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, সামরিক শাসনের ভয়েই ভোটের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন ইউনুস।