আলাপন সাহা: কেক-কাটার পর্ব সেরে ক্রিকেটাররা যে যার মতো নিজেদের রুমে ফিরছেন। কিছুক্ষণ পরই আবার সবার টিম রুমে চলে আসার কথা। আইপিএল জয়ের উৎসব চলবে। কিন্তু ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha) ওসব থেকে অনেকটাই দূরে। চ্যাম্পিয়ন লেখা টি শার্টটা পরে হোটেল হায়াতের ছ’তলার ঘরে বসে যখন আড্ডা শুরু হল, তখন ঘড়িতে তিনটে বেজে পনেরো। আড্ডা শেষ হল যখন, ভোরের আলো ফুটে গিয়েছে। যার নির্যাস এ রকম..
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথম কী মনে হয়েছিল?
ঋদ্ধি: মনে হল, এবার গুজরাতি থালিটা অর্ডার করতে পারব। (হাসি)।
গুজরাতি থালি?
ঋদ্ধি: আসলে গুজরাতি খাবার আমার খুব পছন্দের। এখানে আগাসিয়ে বলে একটা হোটেল আছে। ওখানকার গুজরাতি থালিটা খুব ভাল। গত কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম অর্ডার দেব। কিন্তু দিইনি।
কেন?
ঋদ্ধি: গ্রুপ পর্বের সময় টিম ম্যানেজারকে বলেছিলাম যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই গুজরাতি থালি খাব। তার আগে নয়। একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম বলতে পারেন। আমি এরকমই। একবার অনূর্ধ্ব ২২ দলে খেলার সময় কিছুতেই সেঞ্চুরি হচ্ছিল না। তখন ঠিক করেছিলাম যতদিন না সেঞ্চুরি হচ্ছে, ননভেজ খাব না। প্রায় ছয় মাস পর সেঞ্চুরিটা করেছিলাম। ওই ছ’মাস ননভেজ ছুঁইনি।
[আরও পড়ুন: আইপিএলে ভাল কাজের স্বীকৃতি, পিচ কিউরেটর-মাঠকর্মীদের বিরাট অর্থ পুরস্কার দিচ্ছে BCCI]
শুনেছিলাম, আপনি আরও একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবারের আইপিএলে এসেছিলেন।
ঋদ্ধি: হ্যাঁ। পুল শটে উন্নতি করতে চেয়েছিলাম। আশা করি পেরেছি। এবার আইপিএলে প্রত্যেকটা পুল শট মারার পরই গ্যারির (কার্স্টেন) মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।
কেন?
ঋদ্ধি: এখানে প্রথম যখন প্র্যাকটিস শুরু হয়েছিল, তখন কার্স্টেন (Gary Kirsten) এসে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে কোন ব্যাপারে আমি উন্নতি করতে চাই। বলেছিলাম পুল আর কাট শটে। তারপর দুটো প্র্যাকটিস ম্যাচ হয়েছিল। ওখানে যেভাবে ব্যাট করেছিলাম, তারপর গ্যারি বলেছিল যে, তুমি তো দারুণ পুল মারছ। আর কত উন্নতি করবে?
ফাইনাল জেতার পরও আপনাদের টিমকে প্রচণ্ড শান্ত দেখাল। এত বড় অ্যাচিভমেন্টের পরেও কী করে এরকম থাকল টিমটা?
ঋদ্ধি: আমরা যতটুকু উচ্ছ্বাস করার সেটা করেছি। তাছাড়া শুরু থেকেই টিমে বিশ্বাসটা ছিল যে, আমরা ভাল কিছু করতে পারি। অনেকে অনেক কিছুই বলেছিলেন। বলা হচ্ছিল এই টিমে হার্দিক পাণ্ডিয়া আর রশিদ খান ছাড়া কোনও তারকা নেই। ভাল ক্রিকেটার নেই। আশা করি তাঁরা জবাবটা পেয়ে গিয়েছেন। টিমে প্রত্যেকে প্রত্যেকের উপর প্রচণ্ড ভরসা করে। কঠিন পরিস্থিতিতেও কেউ আমরা প্যানিক বাটন প্রেস করিনি। জানতাম, কেউ না কেউ ঠিক জিতিয়ে দেবে। চেন্নাই সুপার কিংসের পর আর কোনও আইপিএল টিমে এরকম পরিবেশ পাইনি।
কী রকম? একটু বলবেন?
ঋদ্ধি: সবাই প্রচণ্ড খোলামেলা। এখানে যে কোনওরকম সমস্যায় যে কেউ যে কারও কাছে যেতে পারে। এখানে কারও তারকা সুলভ ইগোটা নেই। টিম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যেকে ভীষণ ভাল। যারা একটা ম্যাচও খেলেনি, তারাও সমান সমাদর পেয়েছে। নেটে গিয়ে তারাও তিরিশ-চল্লিশ মিনিট ব্যাট করেছে। আমি নিজেও প্রথম পাঁচটা ম্যাচে খেলেনি। তারপরও নেটে অনেকক্ষণ ব্যাট করতাম। গুজরাত নেটে যতক্ষণ ব্যাট করেছি, গোটা আইপিএলে করিনি।
প্রথম আইপিএল আর্বিভাবে গুজরাতের ট্রফি জেতার মতো আপনার এবারের জার্নিটাও সমান রোমাঞ্চের। নিলামের প্রথম দিন অবিক্রিত থাকা। তার পর অবিশ্বাস্য পারফর্ম করে সোজা চ্যাম্পিয়ন।
ঋদ্ধি: আমার কাছে এই আইপিএল (IPL 2022) ভীষণ স্পেশাল। আট বছর আগে ফাইনালে কেকেআরের (KKR) বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু তারপরও আমরা ট্রফি জিততে পারিনি। আর যদি নিলামের কথা বলেন, তাহলে বলব, প্রথমে ভেবেছিলাম টিম পেয়ে যাব। তবে প্রথম দিনের পর আর আশা করিনি। কারণ টিমগুলো মোটামুটি যাঁদের নেওয়ার প্রথম দিন নিয়ে নেয়। এখানে আসার পর শুনেছিলাম যে, ওরা শেষদিকে ঠিকই করে রেখেছিল উইকেটকিপার নেবে। তবে আমি এখানে মহম্মদ শামির কথাও বলতে চাই।
শামি কেন?
ঋদ্ধি: আশিস নেহরাকে টেক্সট করেছিল শামি। বলেছিল যে, মিডল অর্ডার আরও শক্তিশালী করতে। এটাও বলেছিল ভাল উইকেটকিপার নেই। তাই ঋদ্ধির কথা ওরা ভাবতে পারে।
গুজরাত টাইটান্স টিম ম্যানেজমেন্ট আপনাকে নিয়ে তো দারুণ উচ্ছ্বসিত?
ঋদ্ধি: ওরা প্রচণ্ড খুশি। ফাইনালের পর টিমের সিইও আমাকে কোলে তুলে নিল। ডেভিড মিলার (David Miller) এসে জড়িয়ে ধরল। মিলার টিমের একজনকে বলল, ঋদ্ধি এমনই একজন ক্রিকেটার যে কখনও অভিযোগ করে না। দলের প্রয়োজনে সবসময় এগিয়ে এসেছে। দলের যা যা দরকার, সে’সব করেছে। এরকম টিম ম্যান আমি খুব কম দেখেছি।