নব্যেন্দু হাজরা: প্রচার নেই। আর তাই চালু হওয়ার কয়েক মাস কেটে গেলেও যাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে না যাত্রীসাথী অ্যাপ। প্রায় ১৯ হাজার চালক এই অ্যাপ ডাউনলোড করে রাখলেও তাতে সেভাবে বুকিং আসছে না বলে অভিযোগ। যেখানে কলকাতায় বাকি তিন অ্যাপ ক্যাবে দিনে ৮০-৯০ হাজার বুকিং হয়, সেখানে যাত্রীসাথী হয় মেরেকেটে হাজার পাঁচেক। স্বাভাবিকভাবেই বুকিং কম হওয়ায় সরকারের তৈরি নয়া অ্যাপে গাড়ি চালাতে আগ্রহ হারাচ্ছেন চালকরা। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে অ্যাপ ক্যাব সংগঠনগুলোকে ডাকা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। সেখানে চালকরা তাঁদের সমস্যার কথা জানান। সরকারের তরফেও অ্যাপকে আরও আধুনিক করার কথা জানানো হয়েছে বলে খবর।
মাস তিনেক পরীক্ষামূলকভাবে চলার পর পুজোর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় যাত্রীসাথী অ্যাপ। সরকারের তৈরি এই অ্যাপে ক্যাব এবং হলুদ ট্যাক্সি দুই-ই বুক করা যায়। এবং সবথেকে বড় সুবিধা এই অ্যাপের সাহায্যে গাড়ি বুক করলে বাড়তি কোনও সার্জ চার্জ দিতে হয় না যাত্রীদের। প্রথম প্রথম ভালো সারা মিললেও ক্রমশ যেন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে যাত্রীসাথী। রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের তরফে এই অ্যাপটি চালু করা হয়েছে। সরকারি এই অ্যাপে অন্য ক্যাবের তুলনায় ভাড়া অনেকটাই কম। চালকদেরও রোজগার বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পরেনি এই অ্যাপ।
[আরও পড়ুন: ভোটের আগে কৃষকদের অনুদান নয়, তেলেঙ্গানা সরকারকে অনুমতি দিয়েও প্রত্যাহার কমিশনের]
চালকদের দাবি, এখন যাত্রীরা একসাথে একাধিক অ্যাপে ক্যাব বুক করছেন। যেটায় কম ভাড়া দেখাচ্ছে এবং আসতে কম সময় নিচ্ছে, সেটাতেই চড়ছেন তাঁরা। যেহেতু যাত্রীসাথীতে ক্যানসেলেশন চার্জ নেই, তাই যাত্রীরা ট্রিপ বুক করেও বাতিল করে দিচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, দিনে প্রায় ৪৫ হাজার মতো যাত্রীসাথী অ্যাপে গাড়ি সার্চ হচ্ছে। অথচ বুক হচ্ছে মাত্র হাজার পাঁচেক। চালকদের বক্তব্য, গাড়ি ঘুরে গেলে ভাড়া বাড়ছে না। ওয়েটিং চার্জ বাড়ছে না। তাই অনেক এই অ্যাপে গাড়ি না চালিয়ে উবের বা ইনড্রাইভে গাড়ি ছোটাচ্ছেন। অধিকাংশ চালকই একসাথে চারটি অ্যাপ রাখেন ফোনে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দিন শেষে উবেরে যদি ১০-১২টা বুক আসে, সেখানে সরকারের এই অ্যাপে আসছে মাত্র তিন-চারটি।
যাত্রীদের একাংশের দাবি, এই অ্যাপে গাড়ি বুক করলে চটজলদি পাওয়া যায় না। অনেকক্ষেত্রে অন্য অ্যাপ ক্যাবের সঙ্গে ভাড়ারও খুব একটা তারতম্য থাকে না। আর বেশিরভাগ হলুদ ট্যাক্সি আসে। যেগুলোর কোনওটার সিট ছেড়া। কোনওটার দরজা ভাঙা। তাই লজঝড়ে ট্যাক্সি বুক না করে যাত্রীরা ঝা-চকচকে অ্যাপ ক্যাব বুক করছেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দ্রুত গাড়ি পাওয়া। সেটা সবসময় যাত্রীসাথীতে হয় না। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ লাক্সারি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক তন্ময় কুন্ডু বলেন, ‘‘যাত্রীসাথী অ্যাপ প্রায় ১৯ হাজার চালক ফোনে ডাউনলোড করেছে। কিন্তু সেভাবে বুকিং হয় না। তাই চালকরা অন্য অ্যাপে বেশি গাড়ি ছোটাচ্ছেন। আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’ এআইটিইউসি অনুমোদিত ট্যাক্সি সংগঠনের আহ্বায়ক নওয়ালকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘সরকারের তরফে যে অ্যাপ এনেছে, তাতে চালক এবং যাত্রী উভয়েরই সুবিধা হবে। কিন্তু এই অ্যাপের আরও প্রচার প্রয়োজন।’’