অর্ণব আইচ: নিত্যনতুন বান্ধবী জোগাড় করতে চুরি। যুবকের চেহারায় রয়েছে চেকনাই। কথাবার্তা বা ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে যান অনেক তরুণীই। যে সুন্দরী তরুণী নতুন ‘বন্ধু’টির হাত ধরে ঝাঁ চকচকে রেস্তোরাঁয় ঢুকলেন, তিনি জানেন ‘বন্ধু’টি ব্যবসায়ী। বোঝার উপায় নেই যে, এই সুদর্শন ছেলেটিই রীতিমতো রেনপাইপ বেয়ে বাড়ির চারতলায় উঠে মোবাইল (Mobile) আর ল্যাপটপ (Laptop) চুরি করত। সেগুলি বিক্রির টাকায় চাহিদা মেটাত বান্ধবীদের। যদিও সিসিটিভির ফুটেজেই ঝুলি থেকে বের হল বিড়াল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থেকে লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হল জয়দেব জানা ওরফে সুজয়। তার কাছ থেকেই উদ্ধার হল তিনটি আইফোন, দু’টি অ্যানড্রয়েড ফোন, তিনটি আইপ্যাড ও একটি ল্যাপটপ।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা এলাকার মন্মথনগর গ্রামের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সের জয়দেব পড়াশোনায় খুব খারাপ ছিল না। তার চেহারা দেখে ও ব্যবহারে প্রেমে পড়ে যেতেন অনেক তরুণীই। আর নিত্যনতুন বান্ধবী ‘জোগাড়’ করাই ছিল তার নেশা। তার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকেও সে কাজে লাগাত। নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিত। কখনও বা নাম ভাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিত ‘সুজয়’ বলে। বান্ধবীদের নিয়ে ঘোরাঘুরির জন্য প্রয়োজন হত টাকার। আর টাকা জোগাড় করার জন্য হাত পাকিয়েছিল চুরিতে।
[আরও পড়ুন: Kolkata Municipal Election 2021: ‘পুরভোটের আগেই হেরে বসে আছেন’, দলীয় বৈঠকে প্রচারবিমুখ বিজেপি নেতাদের ধমক মালব্যর]
তার নজরে থাকত দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর, গলফগ্রিন, নেতাজিনগর এলাকার বহুতলগুলি। বিশেষ করে যে ফ্ল্যাটে পেয়িং গেস্ট বা ছাত্রছাত্রীরা থাকেন, সেটিকেই লক্ষ্য করত সে। ছোটবেলায় গাছে চড়ার অভ্যাস কাজে লাগিয়েই রেনপাইপ বেয়ে তরতর করে উঠে যেত বাড়ির চারতলার বারান্দায়। অনেকেই বারান্দা ও ঘরের লাগোয়া দরজা বন্ধ করেন না। সেই সুযোগ নিয়ে গভীর রাত বা ভোররাতে ঘরের ভিতরে ঢুকত সে। টেবিলের উপর থেকে হাতিয়ে নিত মোবাইল, ল্যাপটপ। একইভাবে পাইপ বেয়ে নেমে পড়ত সে। এই কাজের জন্য সোনারপুরে ঘরও ভাড়া নিয়েছিল জয়দেব।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের বাকি পুরসভাগুলিতে ভোট কবে? হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানাল নির্বাচন কমিশন]
গত এক মাসের মধ্যে সে গল্ফগ্রিন এলাকার দু’টি বহুতলে হানা দিয়ে চুরি করে। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শুরু করে নিশ্চিত হয়, সেগুলি একই লোকের কাজ। সেই সূত্র ধরে বহুতল ও এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ ঘেঁটে পুলিশ জয়দেবকে শনাক্ত করে। এর আগেও পুলিশের খাতায় নাম ছিল তার। সূত্রের মাধ্যমে সোনারপুরে তার বাড়ির হদিশ পান গোয়েন্দারা। তাকে জেরা করে অন্য কোনও জায়গায় সে চুরি করেছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।