সৈকত মাইতি, তমলুক: আশ্বিণের শুরুতে আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ নয়, বরং বর্ষাকালের মতো কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে রয়েছে দিনের বেশিরভাগ সময়। আর বৃষ্টির খামখেয়ালিপনা তো আছেই। এই অকাল বর্ষণে জল থইথই মাঠঘাট, আনাচকানাচ জলে ডুবে গিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জে খালবিল, নদীনালা, জলাশয় জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই জলে অবাধ বিচরণ করছে সাপের (Snakes) দল। বাড়ির উঠোন, রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। কখনও কখনও অসাবধানতাবশত সাপের ছোবলে অঘটনও ঘটে যাচ্ছে। আর তার পালটা হিসেবে পিটিয়ে মারা হচ্ছে বিষাক্ত সরীসৃপদেরও। কিন্তু এভাবে পথ ভুলে যত্রতত্র চলে যাওয়া নিরীহ সাপেদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন কোলাঘাটের যুবক প্রলয় ঘোষ। সাপের খবর পেয়ে তিনিই এগিয়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করছেন।
কোলাঘাটের (Kolaghat) শ্রমজীবী যুবক প্রলয় ঘোষ কৈশোর থেকেই সাপ অন্তঃপ্রাণ। কোথাও সাপ বেরিয়েছে জানতে পারলে সব কাজ ছেড়ে সাপ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে সাইকেল চালিয়ে সেখানে হাজির হয়। বহু সচেতন মানুষ নিজেদের বাড়িতে বা আশেপাশে বিষধর সাপ বের হলে প্রলয়কে ডেকে নিয়ে যান। তিনিও দক্ষতার সঙ্গে উদ্ধার করে আনেন নির্বিষ, বিষধর সাপেদের (Poisonous Snakes)। তাঁর কথায়, ”এই পৃথিবীটা কেবল মানুষের জন্য নয়। জীবজগতের সবাই সবার উপর নির্ভরশীল। সবাইকে বেঁচে থাকতে হবে। সাপ নিরীহ প্রাণী। নেহাৎ আক্রান্ত না হলে আক্রমণ করে না।”
[আরও পড়ুন: মমতার কণ্ঠে ‘বাংলার মাটি’, দুবাইয়ে প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে রাজ্য সংগীত গাইলেন মুখ্যমন্ত্রী]
সাপুড়েদের দেখে এবং ইন্টারনেটে (Internet) এই বিষয়ক ভিডিও দেখেই সাপ ধরার কৌশল শিখেছেন প্রলয়। আর বাস্তবে কাজ করে সে বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। কোলাঘাটের আশপাশের গ্রামে কোথাও মাছশিকারি মুরগি থেকে, কারও খড়ের গাদা, জঞ্জালের স্তুপ থেকে, আবার কারও বাড়ির ভিতরে থেকে সাপ উদ্ধার করে চলেছেন প্রলয়। গত দুমাসে প্রায় সতেরোটি বিষধর এবং লুপ্তপ্রায় প্রজাতির সাপ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন তিনি। প্রলয় বলছেন, ”বনদপ্তরে খবর দেওয়া হলেও তাঁরা কখনওই সময়মতো আসেন না।”
দু- চারদিন পর্যন্ত প্রলয় ওই সাপগুলো বাড়িতেই প্লাস্টিক জারে ভরে যত্ন করে রেখে দেন। বনদপ্তরে কর্মীরা এলে তাঁদের হাতে সাপগুলোকে তুলে দেন। গত এক সপ্তাহে ৬ টি সাপ উদ্ধার করেছেন কোলাঘাটের যুবক। এই তালিকায় রয়েছে প্রায় ৬ ফুটের বিষে টইটম্বুর তেঁতুলে খরিশ, গোখরো, চন্দ্রবোড়া, কেলে খরিশের মত বেশ বড়মাপের বয়স্ক এবং ছোট সাপ। অনেক আহত সাপকে প্রলয় পরিচর্চায় সুস্থ করে বনদপ্তরে হাতে তুলে দিয়েছেন। না, এর জন্য প্রলয় কখনও কোনও পারিশ্রমিক বা অর্থ নেন না। দিন আনা দিন খায় যুবক স্বেচ্ছায় শুধু সাপকে ভালোবেসেই বিপদের ঝুঁকি নিয়ে এই জীবসেবা করে চলেছেন।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় বসে আয়ারল্যান্ডের মহিলার সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৩]
প্রলয়ের কথায়, ”বিষধর সাপ দেখলেই কিছু মানুষ মেরে ফেলতে উদ্যত হয়। খুবই দুঃখজনক। আবার বনদপ্রতকে খবর দিলেও ওঁরা সবসময় আসেন না। আমি আমার এলাকায় যতটা পারি করছি। বনদপ্তরকে যে জারে ভরে সাপগুলো দিই সেই জারগুলোও আমি পয়সা দিয়ে কিনে দিই। কোলাঘাট নতুন বাজারের একটি ক্লাব থেকে আমাকে সাপ ধরার লাঠি বা স্নেক স্টিকার-সহ কিছু সরঞ্জাম কিনে দিয়েছি, বিভিন্নভাবে সাহায্য করে, এর জন্য আমি ওই ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। মানুষের কাছে অনুরোধ, আপনারা সাপ বের হলে মারবেন না। বনদপ্তরের কাছে অনুরোধ, আপনারা খবর পেলে একটু সময়মতো আসুন, সাপগুলোকে বাঁচান।”
দেখুন ভিডিও: