শংকর ভট্টাচার্য: ফের কেরলের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অসন্তোষ জানিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ চাইলেন ভিএস অচ্যুতানন্দন। সিপিএমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভি এসের ক্ষোভ, দলেরই বিধায়কের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে। শোরানুর কেন্দ্রের বিধায়ক পিকে শশীর বিরুদ্ধে পার্টিরই যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের এক নেত্রী শ্লীলতাহানি ও যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন। দলের সর্বস্তরের নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। এই অবস্থাতেই সরব হয়েছেন ভিএস। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে লেখা চিঠিতে তিনি প্রশ্ন করেছেন, যৌন হেনস্তার মতো ঘটনায় পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তাই অবিলম্বে এই বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা প্রয়োজন। এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। তার তদন্ত করবে পুলিশ।এমন ঘটনা চেপে গেলে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।
[রেল হাসপাতালে বহিরাগতদেরও বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ]
কিন্তু পার্টি ভি এস অচ্যুতানন্দনের এই আবেদনে কান দিচ্ছে না। বরং দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই বিষয়ে পার্টির তদন্ত কমিশন খতিয়ে দেখে মতামত দেবে। বাইরে কিছু জানানো হবে না। মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়ন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর বদলে শিল্পমন্ত্রী ইজি জয়রাজন জানিয়ে দিয়েছেন, কোনওভাবেই বিষয়টি পুলিশকে জানানো হবে না। দলই তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবে। এই ইস্যুতে তোলপাড় কেরলের বাম রাজনৈতিক মহল।
[ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিতর্ক, গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত অসমের তিনসুকিয়া]
কিন্তু ঠিক কী অভিযোগ? কেরলের সিপিএম রাজ্য সংগঠনে সেই মহিলার অভিযোগ, তাঁকে পালাক্কাড জেলার মান্নারকাড এরিয়া কমিটির দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়। এলাকার প্রভাবশালী নেতা, মান্নারকাড এড়িয়ে কমিটির সম্পাদক, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পিকে শশী নাকি তাঁকে ফাঁকা ঘরে শ্লীলতাহানি করেন। ফোনেও তাঁকে পরে অশালীন কথা বলা হয়। ১৫ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ তিনি দলের নেতৃত্বের হাতে তুলে দেন। আগস্ট মাসে সেই অভিযোগ তিনি প্রথমে রাজ্য নেতৃত্বকে জানান। কাজ হয়নি। তার পর পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটকেও বিষয়টি খুলে বলেন। বৃন্দা বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বের উপর ছেড়ে দেন। তার পর সরাসরি পার্টির সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে অভিযোগ জানান সেই মহিলা। ইয়েচুরি অভিযোগ পাওয়ার পর দলের আইন অনুসারে রাজ্য নেতৃত্বকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তার পরই একে বালান ও পিকে শ্রীমতীকে নিয়ে তৈরি হয় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি। সেই কমিটির রিপোর্ট এই মাসের শেষের দিকে প্রকাশ পাবে বলে জানা গিয়েছে।
[বিমানে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ! ১.৩৫ লক্ষ টাকা জরিমানা ইন্ডিগো-র]
এই বিষয়ে কেরলের রাজ্য বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ভাইকম বিশ্বম তিরুবনন্তপুরম থেকে ফোনে বলেন, “আমরা নিজেরাই তদন্ত করছি। তা ছাড়া ওই মহিলা নেত্রী নিজেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেননি। আমরা নিজেদের সংগঠনের তদন্তের উপর ভরসা করি।” দলের একাংশের অভিযোগ, এর আগেও এর্নাকুলাম জেলা কমিটির সম্পাদক গোপী কোট্টামুরিক্কাল এবং কান্নুর জেলা কমিটির সম্পাদক পি শশীর বিরুদ্ধেও মহিলা দলীয় কর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়নি। দলীয় তদন্তেই বিচার হয়েছিল। কেরলের পার্টি সূত্রের একাংশের অভিযোগ, এর মধ্যেই সেই মহিলাকে দলের যুব শাখার রাজ্য নেতৃত্বের পদ এবং এক কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য, তিনি যেন কোনওভাবেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের না করেন। যদিও এই অভিযোগকে বিরোধীদের অপপ্রচার বলে জানাচ্ছেন দলের নেতৃত্ব। তবে গির্জায় নানকে ধর্ষণ কাণ্ডের সঙ্গেই এই ইস্যুতেও উত্তাল কেরল। সেই ঘটনা নিয়েও ভিএস পুলিশের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে ছিলেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এরপর কি বিধায়ক কাণ্ডে তেমন ঘটবে? সেই দিকেই তাকিয়ে মালয়ালিরা।
The post বাম বিধায়কের বিরুদ্ধে নেত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, কেরলে চাঞ্চল্য appeared first on Sangbad Pratidin.