মণিশংকর চৌধুরি, ডিব্রুগড়: ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পে কাদম্বিনীর পরিণতির কথা জানতে পেরেছিলেন পাঠকরা। কিন্তু অসমের এক লক্ষ ২০ হাজার মানুষ কোনওভাবেই নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে পারছেন না। ফলে ডি-ভোটার তকমা জুটেছে তাঁদের কপালে। আর তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বুথমুখী হওয়ার অধিকার তাঁদের নেই।
রাজ্যের মুখ্য় নির্বাচনী আধিকারিক মুকেশ সাহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এবার অসমের ১.২ লক্ষ মানুষ ভোট দিতে পারবেন না। কারণ তাঁরা ডি-ভোটার। অর্থাৎ এঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে যাঁদের নাম নাগরিকপঞ্জিতে ওঠেনি, সেরকম ব্যক্তি যদি ভোটার তালিকায় থাকেন, তাহলে তাঁদের ভোট দিতে কোনও বাধা নেই। ১৯৯৭ সালে এই ডি-ভোটার সিস্টেম চালু করেছিল নির্বাচন কমিশন। যাঁরা নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে পারেননি, তাঁরাই এই তালিকায় পড়েন। অথচ এই সমস্ত মানুষের কাছে নিজেদের ভারতীয় প্রমাণ করার একগুচ্ছ নথিপত্র রয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্য তথা দেশের প্রতিনিধি বাছাইয়ের মহাযজ্ঞে অংশ নিতে পারবেন না তাঁরা। গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগের কোনও অধিকার নেই তাঁদের। এ সমস্যা কীভাবে দূর হবে বা আদৌ হবে কিনা, তা সময়ের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
[আরও পড়ুন: সবচেয়ে উগ্র হিন্দুধর্ম, বিতর্কিত মন্তব্য করে কটাক্ষের শিকার উর্মিলা]
অসমের বর্তমান জনসংখ্যা তিন কোটি ৩০ লক্ষ। ১১, ১৮, ২৩ এপ্রিল তিন দফায় ২.৯ কোটি মানুষ এখানে ভোট দেবেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই আবার নাগরিকপঞ্জিতে নাম নেই। ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নাগরিকপঞ্জির ড্রাফট থেকে বাদ পড়েছে। চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে তাঁদের ভবিষ্যৎও। কারণ তাঁরা জানেন, এবছর ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে বলে ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু চলতি বছর জুলাইয়ে যখন চূড়ান্ত এনআরসি বেরিয়ে যাবে, সেখানে যদি নাম না থাকে, সেক্ষেত্রে ভোটার তালিকা থেকেও নাম উধাও হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে হোজাইয়ের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব বলছেন, “এনআরসি প্রক্রিয়াতে কোথাও না কোথাও হিন্দু বাঙালিদেরই টার্গেট করা হয়েছে।” অসমের মুখ্য এনআরসি তত্ত্বাবধায়ক প্রতীক হাজেলার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
গত বছর মে-জুন মাসে যখন নাগরিকপঞ্জিকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল অসম, তখনই আশঙ্কা করা হয়েছিল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর প্রভাব নির্বাচনেও পড়বে। বাস্তবে তাই হল। নির্বাচনের আগে দিশেহারা এ রাজ্যের বহু পরিবার। কেউ ডি-ভোটার তো কারও নাগরিকপঞ্জিতে নাম ওঠেনি। এই যেমন অসমের গোলাঘাট বা অধুনা শিবসাগর জেলার বাসিন্দা প্রসন্ন দাসের কথাই ধরা যাক। ১৯৬৫ সালে এ রাজ্যেই জন্মেছিলেন। কিন্তু ১৯৮৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশি হওয়ার অভিযোগ ওঠে। রাতারাতি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যান। নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে ওই বছরই গুয়াহাটি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন প্রসন্নবাবু। প্রায় তিন বছর চলে মামলা। নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষটি নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে মামলা চালান। তবে শেষমেশ সুবিচার পান। অথচ এই দাস পরিবারেরই বেশ কয়েকজনের নাম এনআরসি-তে নেই। তবে কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে? নতুন করে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন প্রসন্নবাবু। IMDT আইন বাতিল করা হলেও এনআরসির প্রক্রিয়ায় এমন বহু মানুষের ভবিষ্যৎ কিন্তু অনিশ্চিত। তাঁদের পরিণতি কী হবে? উত্তর অধরা।
[আরও পড়ুন: ‘ছেলেকে সত্যি বলতে শেখাননি মোদির বাবা-মা’, বিতর্কিত মন্তব্য অজিত সিংয়ের]
The post কপালে জুটেছে ডি-ভোটার তকমা, অসমে ভোট দিতে পারবেন না ১.২ লক্ষ মানুষ appeared first on Sangbad Pratidin.