অর্ণব আইচ: নারীপাচার চক্রের মাথা কলকাতার এক ট্যাক্সিচালক। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে একদিকে রাজারহাট, সল্টলেক অন্যদিকে ধর্মতলা, খিদিরপুর বা গড়িয়াহাট। সারা শহরজুড়ে গতিবিধি তার।
আনলকের পরও একদিকে বন্ধ পানশালা। অন্যদিকে, করোনা আতঙ্কে বাজার মন্দা যৌনপল্লিতে। তাই বাংলাদেশ থেকে কলকাতা ও বিভিন্ন রাজ্যের পানশালা ও যৌনপল্লিতে পাচার হয়ে আসা বার নর্তকী ও যৌনকর্মীরা এখন ফেরত যেতে চাইছেন বাংলাদেশে নিজেদের বাড়িতে। এবার দশ হাজার টাকার প্যাকেজে তাঁদের বাংলাদেশে পাচারের দায়িত্ব নিয়েছে ওই ট্যাক্সিচালক ও তার সঙ্গী সীমান্তবর্তী এলাকায় বাসিন্দা কিছু দালাল। সোমবার বাংলাদেশে পাচার হওয়ার আগেই ধরা পড়ে যাওয়া এক তরুণীকে জেরা করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন বিএসএফ গোয়েন্দা ও পুলিশ আধিকারিকরা। একইভাবে গত মাসেও একইভাবে বাইপাসের ধারে একটি পানশালার নর্তকী বাংলাদেশ পালানোর সময় ধরা পড়েন। ধরা পড়েছিলেন মহারাষ্ট্রের এক বাংলাদেশি যৌনকর্মীও। নারী পাচারে অভিযুক্ত কৃতি নামে ওই ট্যাক্সিচালকের গাড়ির নম্বর পেয়েছে পুলিশ। তাকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্তে স্বরূপনগরের হাকিমপুরের বাসিন্দা এক দালালকে বিএসএফের গোয়েন্দা ধরে ফেলেন। তারিকুল গাজি নামে ওই দালালের সঙ্গেই ধরা পড়েন বাংলাদেশি যুবতী। বাংলাদেশের গোয়াবান্দার বাসিন্দা যুবতীর কাছ থেকে প্রায় ৬২ হাজার টাকার সোনার গয়না পাওয়া যায়। গোয়েন্দাদের জেরার মুখে ওই যুবতী জানান, গত বছরের জুলাই মাসে রূপা নামে এক বন্ধুর সঙ্গে বনগাঁর সীমান্ত চোরাপথে পার হয়ে এই দেশে আসেন বাংলাদেশের ওই যুবতী। এক মাস বনগাঁয় থাকার পর দুজনেই উত্তর কলকাতার সোনাগাছির যৌনপল্লির একটি ঘরে গিয়ে থাকেন। দিন পনেরো সেখানে ব্যবসাও করেন দুজন। এর পর রুপা ওই যুবতীকে নিয়েই রওনা হন বেঙ্গালুরুতে। বেঙ্গালুরুর রোশননগরের যৌনপল্লিতে রুপা যৌনকর্মীর কাজ করেন। বাংলাদেশের ওই যুবটিকেও এই কাজে লাগিয়ে দেন তিনি। গত অক্টোবর মাসে যুবতীর ঘরে আসেন সুরেশ ওরফে শিবা নামে এক খদ্দের। বারবার যাতায়াতের পর দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।
[আরও পড়ুন: হাতে সিরিঞ্জ-কম্বল নিয়ে SSKM থেকে উধাও করোনা রোগী, ধরা পড়ল সিসিটিভি ফুটেজে]
গত ডিসেম্বরে যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে এসে যুবকের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন যুবতী। বেঙ্গালুরুর পানশালায় কাজ করতে শুরু করেন। লকডাউনের পর দুজনেরই রোজগার কমতে শুরু করে। মনোমালিন্য তৈরি হয়। যুবতী বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গত রবিবার রাত দশটা নাগাদ বেঙ্গালুরু থেকে বিমানে করে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন তিনি। আগে থেকেই যোগাযোগ করা ছিল ট্যাক্সিচালক কৃতির সঙ্গে। কৃতি যে নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত, তা জানতেন ওই যুবতী। টাক্সি চালকের সঙ্গে দশ হাজার টাকার চুক্তি হয় তাঁর। এই প্যাকেজেই কলকাতা থেকে বসিরহাট সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে চোরাপথে বাংলাদেশ সীমান্ত পার করানো হবে বলে যুবতীকে জানানো হয়। গভীর রাতে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাতটা চালকের সঙ্গে ট্যাক্সিতে কাটান যুবতী। সকালবেলা উত্তর ২৪ পরগনার হাকিমপুরে ট্যাক্সিচালক তার দুই দালাল সঙ্গী আলমগীর ও লালুর হাতে তুলে দেয় যুবতীকে। তারা তাকে বিথারিতে নিয়ে যায়। তুলে দেয় অন্য দালাল তারিকুলের হাতে। তারিকুলের পাওয়ার কথা ছিল এক হাজার টাকা। পুলিশের মতে, একই রুটে ট্যাক্সিচালক কৃতির নারী পাচারচক্র বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসে যুবতী ও তরুণীদের। এখন একইভাবে তারা তাঁদের পাচার করে চলেছে বাংলাদেশে। এই পাচার আটকাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএসএফ।
[আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ করোনা আক্রান্ত মা ও সদ্যোজাত, বাড়ি থেকে ধরে আনল পুলিশ!]
The post ১০ হাজারের প্যাকেজে নর্তকী-যৌনকর্মীদের বাংলাদেশে পাচার! চক্রের ‘কিংপিন’ ট্যাক্সিচালক appeared first on Sangbad Pratidin.