সুকুমার সরকার, ঢাকা: ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বাংলাদেশে ১১ জনের মৃত্যু। উপকূলীয় অঞ্চলকে লণ্ডভণ্ড করে সোমবার বিকেলে রেমালের ‘কেন্দ্রভাগ’ প্রবেশ করেছে ঢাকায়। কমেছে গতিবেগ। ঘূর্ণিঝড়টি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে ঢাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।
ঝড়ের প্রভাবে গতকাল থেকে আজ, সোমবার পর্যন্ত পটুয়াখালী,সাতক্ষীরা, ভোলা,চট্টগ্রামে মোট ১১জন মারা গিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন দুর্গত জেলাগুলোর ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, সকালে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ৯০-১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। এখন ঘণ্টা প্রতি ৪০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইছে। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিও হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। রেমালের প্রভাবে ঢাকায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার দিনভর ঢাকায় মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। এরই মধ্যে দেশের বন্দরগুলোকে মহাবিপদ সঙ্কেত ১০ নং থেকে নামিয়ে ৩ নং সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: আরও বাড়ল গরমের ছুটি, কবে খুলবে স্কুল?]
পরিবেশবিদরা বলছেন, বিশ্বের বৃহত্তর প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই দেওয়ালের কারণে উপকূলএলাকায় বন্যার জল ও দমকা বাতাস ঢুকতে পারেনি। সুন্দরবন না থাকলে দেশের উপকূলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত। সুন্দরবনের কারণেই প্রতি বছর বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায় এই অঞ্চল। সকালে উপকূল এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ছিল, তা শক্তি হারিয়ে বিকেলে দমকা বাতাসে রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাস লোকালয়ে পৌঁছানোর আগে সুন্দরবনে বাঁধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কমে যায়। এ কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তেমন থাকে না বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
‘রেমাল’ দুপুরে উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসেবে যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানের পর আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঢাকায় পৌঁছয়। সেখানে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত ঝরিয়ে স্থলনিম্নচাপে পরিণত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগ রাজধানী ঢাকার উপর দিয়ে গেলেও তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হবেনা। ঢাকায় এখন বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার। এদিন ভোর থেকে ঢাকায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে।