সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সালটা ২০১৩-র ফেব্রুয়ারি মাস। ঢাকার মিরপুরে খুন হন মুক্তমনা ব্লগার রাজীব হায়দার নামে এক যুবক। শুরুটা হয়েছিল সেখান থেকেই। এর পর কিছুটা বিরতির পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ব্লগার খুনের ধুম পড়ে যায়। কার্যত প্রতি মাসে একজন ব্লগারকে খুন করা হচ্ছিল প্রকাশ্য রাস্তায়। শুধু খুন নয়, চলতে থাকে ভয়াবহ সব ডাকাতির ঘটনা। বাংলাদেশের মাটিতে এই সমস্ত অপরাধের ঘটনায় উঠে আসে জঙ্গি সংগঠন 'আনসারুল্লা বাংলা টিম' (এবিটি)-এর নাম।
২০১৫ সালে হাসিনা সরকার এই সংগঠনের কোমর ভেঙে দিলেও, সময় বদলেছে। বাংলাদেশের সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে ইউনুসের জমানায় নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে জেহাদি শক্তি। যাদের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গিরা হাত মেলাচ্ছে। যার ফল, বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ভারতের মাটিতেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন। স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের বিশেষ অভিযানে সম্প্রতি কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, অসম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) ৮ জেহাদিকে। এর পরই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে ভয়াবহ এই জঙ্গি সংগঠনের অতীতের নৃশংস সব কুকীর্তি।
২০০৭ সালে জন্ম এই এবিটির। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের জাল বিছানো আল-কায়দা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই সংগঠনটি তৈরি করা হয়। এদের মূল লক্ষ্য ছিল নাস্তিক ও ইসলামের বিরুদ্ধে মন্তব্যকারীদের হত্যা করা। ২০১৩ সালে প্রথম এদের শিকার হন হন রাজীব হায়দার। তাঁকে খুনের পরই সক্রিয় হয়ে ওঠে হাসিনার সরকার। ওই বছর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানীসহ এই সংগঠনের বহু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর এক বছর এদের কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে সংগঠনটি। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় একের পর এক হত্যাকাণ্ড। ওই মাসে ঢাকায় ব্লগার ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে এবিটি। মার্চে ওয়াশিকুর রহমান ও মে মাসে সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ, এপ্রিলে আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে নয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়াও আসিফ মহিউদ্দিন, একেএম শফিউল ইসলামের মতো অসংখ্য মুক্তমনা ব্লগারকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে খুন করে এই সংগঠনের সদস্যরা।
একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসে তৎকালীন হাসিনা সরকার। গ্রেপ্তার করা হয় এই সংগঠনের অসংখ্য সদস্যকে। কার্যত কোমর ভেঙে দেওয়া হয় সংগঠনটির। তদন্তে জানা যায়, এদের লক্ষ্য ছিল প্রতি মাসে একজনকে টার্গেট করে খুন করা। তবে এবিটি যে বাংলাদেশের মাটি থেকে লুপ্ত হয়ে যায়নি তা সাম্প্রতিক সময়ে ফের স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হাসিনা বিদায়ের পর জেল ভেঙে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সেই সব খুনিদের। সংগঠন নতুন করে তৈরি করতে কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানের আইএসআই-এর মদতে সেখানকার একাধিক জঙ্গিসংগঠনের কাছ থেকে অস্ত্র ও বিপুল অর্থ সাহায্য পাচ্ছে সংগঠনটি। এই জঙ্গি সংগঠনটি আল কায়দার ছায়া সংগঠন হিসাবেই পরিচিত। পাশাপাশি এদের যোগ রয়েছে বাংলাদেশের জামাত-উল-মুজাহিদিন (জেএমবি), হিজবুত তাহারির মতো জেহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জেহাদের বিষ ছড়াতে বাংলাদেশি জঙ্গিদের পাঠানো হয়েছে ভারতে। লক্ষ্য পৃথক স্লিপার সেল তৈরি করা। কয়েকদিন আগেই গোয়েন্দা সূত্রে খবর এসেছিল, মহম্মদ ফারহান ইসরাকের নেতৃত্বে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মডিউল তৈরির পরিকল্পনা চলছে। এই ইসরাক আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান জসীমউদ্দিন রহমানির খুব কাছের সহযোগী। প্রসঙ্গত, পরিবর্তনের বাংলাদেশে সম্প্রতি এই রহমানিকেই জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, এবিটিয়ের প্রধানের নির্দেশেই এই স্লিপার সেল তৈরির চলছে। গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযানে ধরা পড়েছে এবিটির ৮ জঙ্গি। এদের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় অসম থেকেই। মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মহম্মদ আবাস ও মিনারুল শেখ নামে দুজনকে।