অভিরূপ দাস: ১৪ বছরের বাচ্চা। অসুখের আঘাতে তারই বয়স যেন আশির কাছাকাছি। পরিবারের লোকেদের চিনতে পারত না। ভুলভাল বকত। একাধিক অঙ্গ কাজ করছিল না ঠিকমতো। এদিকে ধুম জ্বর। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, করোনা RT-PCR টেস্ট করায় হাসপাতাল। সব নেগেটিভ। অবাক বিষয়। এদিকে রক্তে রয়েছে করোনার অ্যান্টিবডি! অর্থাৎ কোনও একসময় করোনা হয়েছিল। উপসর্গ না থাকায় বুঝতে পারেননি বাড়ির লোকেরা। কিন্তু সেই করোনাই ডেকে এনেছে এমআইএসসি।
বা মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিন্ড্রোম ইন চিল্ড্রেন। এমনটাই হয়েছিল ১৪ বছরের ব্রতীন দাশগুপ্তর। এই মারণ অসুখ থেকেই তাকে ফিরিয়ে আনল কলকাতার এক বেসরকারী হাসপাতাল। আইভিআইজি ইঞ্জেকশন আর স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিয়ে বাচ্চাটিকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছে অ্যাপোলো হাসপাতাল।
দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাসের ডন বস্কোর নবম শ্রেণির ছাত্রটিকে মৃতপ্রায় অবস্থায় অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবার। আপাতত সে সুস্থ। হাসপাতালে আনার সময় কী ছিল উপসর্গ? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অসহ্য ক্লান্তি, তার সঙ্গে সারা গায়ে র্যাশ। জ্বর ছিল ১০৩ ডিগ্রির আশপাশে। ভয়ংকরভাবে কমে গিয়েছিল প্লেটলেট। চিকিৎসকরা বলছেন এটি থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ার লক্ষণ।
[আরও পড়ুন: করোনাতঙ্কে ফের বন্ধ হচ্ছে বেলুড়মঠ, খুলবে কবে?]
“আচমকা কী এমন হল যে শরীরের একাধিক অঙ্গ কাজ করছে না?” ইনটেনসিভ কেয়ার কনসালটেন্ট ডা. কৌস্তভ চৌধুরী জানিয়েছেন, সন্দেহ হওয়ায় বাচ্চাটির রক্তে আইজিজি টেস্ট করিয়ে দেখা যায় তা পজিটিভ। অর্থাৎ কিশোরের রক্তে করোনার অ্যান্টিবডি রয়েছে। এর মানে কোনও এক সময় তার করোনা হয়েছিল। কিন্তু কোনও উপসর্গ না থাকায় পরিবারের লোক বুঝতেই পারেননি। কিন্তু সেই করোনা শরীরে ডেকে এনেছে ভয়ংকর অসুখ। শিশুটির বাবা জানিয়েছেন, “আমি জানতামই না ছেলে কোনও সময় করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। কোনওদিন সামান্য কোনও উপসর্গও দেখা যায়নি। কিন্তু উপসর্গ না থাকলেও করোনা যে শিশুদের ক্ষেত্রে কত মারাত্মক হতে পারে তা টের পেলাম।”
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নীশান্তদেব ঘটকের কথায়, শরীরে উপসর্গ না থাকলেও করোনা ভাইরাস শিশুটির ব্লাড ভেসেলের মধ্যে প্রদাহ তৈরি করেছিল। তাতেই পরবর্তীকালে হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে গিয়েছিল তার। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে মায়োকার্ডিয়াল ডিসফাংশন। যেখানে সাধারণ মানুষের ইজেকশন ফ্র্যাকশন থাকে ৬০ শতাংশ সেখানে ইকোকার্ডিওগ্রাফিতে দেখা যায় এই শিশুটির তা মাত্র ২৮ শতাংশ। শিশুদের করোনা প্রসঙ্গে ডা. ঘটক জানিয়েছেন, শিশুদের সাধারণত জোরাল করোনা সংক্রমণ খুব বেশি হয় না। তবে অনেক সময়ে বাচ্চাদের মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি ডিজঅর্ডার হয়। অনেকে তা থেকে সুস্থও হচ্ছে। তবে বাড়িতে কারও কোভিড ধরা পড়ার পরে বাচ্চার যদি জ্বর হয়, তাহলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।