shono
Advertisement

চন্দ্রযান-২ অবতরণের শেষ ধাপের ১৫ মিনিট নিয়ে আতঙ্কিত ইসরো

চাঁদের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে যখন ল্যান্ডার পৌঁছবে, তখন তার গতিবেগ ঘন্টায় ৬১২০ কিলোমিটার। The post চন্দ্রযান-২ অবতরণের শেষ ধাপের ১৫ মিনিট নিয়ে আতঙ্কিত ইসরো appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 10:06 AM Jul 23, 2019Updated: 10:06 AM Jul 23, 2019

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীহরিকোটা: অবশেষে স্বপ্নের উড়ান। কিন্তু যৌবনের পা টলমল করবে না তো? উচ্ছ্বাসের লাফে শুধু আবেগ নয়, অবশ্যই চাই অভিজ্ঞতা। আর চাই মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি বুঝে ঠিক সময় সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিক্রম সারাভাইয়ের নাম ডোবাবে না তো ল্যান্ডার? দুর্ভাবনা সঙ্গী করেই পৃথিবী থেকে রওনা হল চন্দ্রযান। চাঁদে লাফিয়ে পড়ার সময়েই তার আসল পরীক্ষা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: চাষ করতে গিয়ে হাতে গুপ্তধন, ৬০ লক্ষ টাকার হীরে পেলেন কৃষক]

ইসরো জানিয়েছে অভিযানের শেষ ধাপের কয়েক মুহূর্তই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম অভিযানের কথা মনে করাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বলছেন, কক্ষপথ পর্যন্ত যাওয়া একেবারে প্রথম চন্দ্রযানের পা মিলিয়েই। সেখানে অঙ্কের হিসাব। এক পা-ও বাইরে না ফেলে সোজা পিতৃপুরুষের দেখানো পথেই চাঁদের কাছে পৌঁছবে ফ্যাট বয়। সেখানেই তার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হবে বলে আত্মবিশ্বাসী ইসরো। তবে এর পরের কাজটা তার নিজের। যেটা তাকে করতে হবে ঠান্ডা মাথায়, ধৈর্য ধরে। ইসরোর শেখানো অঙ্ক কষে, পরিস্থিতি বুঝে তবেই আলতো লাফ। ভাবটা এমন, চাঁদের যেন কষ্ট না হয়।

ইতিমধ্যে শেষ মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ১৫ মিনিটের একটি হিসাব কষে রেখেছে ইসরো। দেখে নেব চাঁদের পিঠে নামার মুহূর্তে শেষ সেই ঝুঁকিপূর্ণ ১৪.৮ মিনিটের যাত্রাপথ কেমন! ১৫ জুলাই রওনা হলে বিক্রমের চাঁদে পৌঁছতে লাগত ৫৪ দিন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৪৮ দিন পাচ্ছে ল্যান্ডার। চাঁদের চারপাশে ঘোরার দিনের হিসাব থেকেই তা বাদ যাচ্ছে। উপরন্তু তার মোট পাক খাওয়ার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পৃথিবীর চারপাশে ঘোরা শেষ হলে পালটা ঘুরে প্রথমে চাঁদের কক্ষপথ ধরতে হবে তাকে। তারপর পৃথিবীর দিনের হিসাব করে চাঁদের কাছে পৌঁছনো।

জেনে রাখা দরকার, চাঁদে পৌঁছে প্রথমেই লাফিয়ে নামবে না বিক্রম। আগে দিন চারেক পাক খাবে। শেষে গতি কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করে চন্দ্রপৃষ্ঠের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যাবে। এর পর তার কাজ অনেকটা বিধুশেখরের মতো। প্রফেসর শঙ্কুর রোবট বিধুশেখরের ছিল প্রবল আবেগ। ইসরো যেন সেই আবেগটুকুই পরম যত্নে পুরে দিয়েছে বিক্রমের বুকে। বিচার-বিবেচনা এরপর তার নিজের।

চাঁদের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে যখন ল্যান্ডার পৌঁছবে তখন প্রচণ্ড বেগে ঘুরছে সে। ঘন্টায় ৬১২০ কিলোমিটার। সাংহাইয়ের বিশ্বসেরা বুলেট ট্রেনের গতিবেগের চেয়ে যা ১৪ গুণ বেশি। এই বুলেট ট্রেনের গতিবেগ ৪৩০ কিলোমিটার। এই গতিই তাকে কমাতে হবে। আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। চাঁদে বায়ুমণ্ডল একেবারে পাতলা। বলা যায় নেইই। তার পরও প্রচণ্ড বেগে বিক্রমের নামার জেরে উল্টো দিক থেকে অর্থাৎ চাঁদের পিঠ থেকে অল্প বেগে হলেও উড়ে আসা ধুলো থেকে বাঁচতে হবে তাকে। সঙ্গে চলবে গতি কমানোর কাজ। ১০.৩ মিনিটের মধ্যে তার গতি কমে হবে ৫৫৯৪ কিলোমিটার। ৭.৪ কিলোমিটার দূরত্বে তার গতিবেগ হবে ৫২৬ কিলোমিটার। এর পর আরও সূক্ষ্ম কাজ। পরের ৩৮ সেকেন্ডে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে নেমে আসবে সে। গতিবেগ হবে ৩৩১ কিলোমিটার। পরবর্তী ৮৯ সেকেন্ডে ল্যান্ডার আরও গতি কমাবে। ৪০০ মিটার উচ্চতা কমিয়ে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে এসে পৌঁছবে সে।

এর পরবর্তী ১২ সেকেন্ড তার বুদ্ধির খেলা। তখন সে থমকে দাঁড়াবে। পরপর তথ্য সংগ্রহ করবে। চাঁদের মাটিতে কীভাবে সে লাফিয়ে নামবে, কতটা দূরত্ব থেকে লাফালে ঝাঁকুনিতে ক্ষতি হবে না সব বিচার তার নিজের। সে পর্ব সেরে পরবর্তী ৬৬ সেকেন্ডে সে নেমে আসবে ১০০ মিটারের মধ্যে। সেখানে আরও ২৫ সেকেন্ড থামবে সে। ইসরো জানিয়েছে, বিক্রমের শরীরে এমন কিছু প্রোগ্রামিং করা আছে যার জেরে তার শরীরই তখন জানিয়ে দেবে কোথায় নামতে হবে। যে দুটি গহ্বরের মধ্যবর্তী সমতল ভূমি ঠিক করা আছে, সেখানেই সে নামতে পারবে কি না। শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে এবার সিদ্ধান্ত নেবে বিক্রম।

পরিস্থিতি ঠিক থাকলে এর ৬৫ সেকেন্ডের মধ্যে চাঁদের পিঠের ১০ মিনিট দূরত্বে নেমে আসবে বিক্রম। এতক্ষণ সে নামছিল আড়াআড়িভাবে, ঘুরতে ঘুরতে। এই জায়গায় সে নামবে সোজাসুজি। তবে এর বিকল্প পথও তৈরি আছে। যদি অন্য পথে তাকে নামতে হয়, তবে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের হিসেব ধরলে, ৪০ সেকেন্ডে তাকে নামতে হবে ৬০ মিনিট দূরত্বে। পরের ১০ মিনিট দূরত্ব নামবে ২৫ সেকেন্ডে। এইটুকু যাত্রাপথ খুব সুখের নাও হতে পারে। তাই গতিবেগ এখানে সে নিজেই নির্ধারণ করবে।

তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১০ মিনিট দূরত্ব থেকে ১৩ সেকেন্ডে চাঁদের মাটিতে আলতো করে লাফিয়ে পড়বে সে। যেখানে রি-টেকের কোনও সুযোগ নেই। তখন তার গতিবেগ শূন্য। ল্যান্ডারের পায়ের তলার সর্ষে তখন কথা বলবে। ১০ মিনিট দূরত্ব পর্যন্ত পাঁচটি ইঞ্জিনই সক্রিয় থাকবে। চাঁদের মাটির স্পর্শ পেলে চার পায়ে লাগানো সেনসর থামতে বলে দেবে ইঞ্জিনগুলিকে।

এর মিনিট পনেরো পর চাঁদের মাটিতে দাঁড়িয়ে চাঁদের প্রথম ছবিটি তুলে ইসরোকে পাঠাবে বিক্রম। তবে চাঁদের মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে তা সে দেখতে পাবে না। সেলফি তোলার বুদ্ধি তখনও যে তার হয়নি। তবে সে যাই হোক, যেমনই হোক চাঁদে দাঁড়িয়ে প্রথম চাঁদের সেই ছবিই বলে দেবে, জয় হল ভারতের। এরপর গবেষণায় মন। ঘন্টা চারেক পর তার গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসবে প্রজ্ঞান রোভার। দুই ভাইয়ে মিলে তখন শুরু হবে চাঁদের পাহাড় আবিষ্কারের পালা। দিনটা সম্ভবত ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯। প্রায় ভোর।

[আর: সম্প্রীতির নজির কানপুরে, শ্রাবণের সোমবারে ভক্তদের দুধ ও ফলদান মুসলিমদের]

The post চন্দ্রযান-২ অবতরণের শেষ ধাপের ১৫ মিনিট নিয়ে আতঙ্কিত ইসরো appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement