দীপঙ্কর মণ্ডল ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: তিন বছর ফেরার থাকার পর সদ্যই উদয় হয়েছেন পাহাড়ে একদা প্রতাপশালী নেতা বিমল গুরুং (Bimal Gurung)। পঞ্চমীর দিন আচমকা কলকাতায় এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি বিরোধিতা আর তৃণমূলকে সমর্থন নিয়ে সুর চড়ান। আর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বার কলকাতাতেই সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দাবি করলেন, তাঁর হাত ধরেই বিজেপি থেকে মোর্চায় (GJM) ফিরলেন ১৭ জন কাউন্সিলর। অন্যদিকে, বিনয় তামাংয়ের পালটা দাবি, দার্জিলিং পুরসভায় এই মুহূর্তে ২৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৮জন তাঁর নেতৃত্বাধীন মোর্চায় রয়েছেন। তাহলে গুরুং ১৭ জনকে কোথায় পেলেন? এই প্রশ্ন তুলেছেন বিনয় তামাং।
২০১৭ সালে পাহাড়ে অশান্তির পর কার্যত আড়াআড়ি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বিমল গুরুং এবং বিনয় তামাং গোষ্ঠী। প্রথমজনতে অশান্তির জন্য দায়ী করেন পাহাড়বাসীর অনেকে। আর দ্বিতীয়জন রাজ্য সরকারের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে শান্তি স্থাপনে আগ্রহী। সেই সখ্য আজও বর্তমান। গুরুং পরবর্তী সময়ে তাঁর হারানো মোর্চা সভাপতির পদে বিনয় তামাংকে বসিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুংয়ের উপর চাপ বাড়াতে রাজ্য সরকার তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে UAPA ধারায় মামলা দায়ের করে। তারপর থেকেই অজ্ঞাতবাসে ছিলেন গুরুং।
[আরও পড়ুন: ‘জাতপাতের রাজনীতি করছেন অমিত শাহ’, আদিবাসী বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে খোঁচা বিরোধীদের]
গত ২১অক্টোবর আচমকা কলকাতায় তাঁকে দেখা যায়। সল্টলেকের গোর্খা ভবনে ঢুকতে বাধা পেয়ে এক পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে একুশের তাঁকে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চান বলে ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। আকারে, ইঙ্গিতে তৃণমূলের জোটসঙ্গী হতে চান।
[আরও পড়ুন: কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বধূকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ, কালিয়াগঞ্জে ধৃত তৃণমূল নেতা]
গুরুংয়ের এই পদক্ষেপ পাহাড় রাজনীতি তো বটেই, রাজ্যজুড়েই একটা প্রভাব ফেলে। এ নিয়ে প্রথমে মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাং (Binay Tamang) মুখে কুলুপ আঁটলেও পরে তিনি এবং জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তামাং জানিয়েছিলেন, গুরুং ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’, তাঁকে নিয়ে কোনও কথাই হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে, আলোচনা হয়েছে জিটিএ নিয়েই।
এর ঠিক দিন দুয়েকের মধ্যেই পালটা সাংবাদিক সম্মেলনে ১৭ জন কাউন্সিলরের হাতে মোর্চার পতাকা তুলে নিজের শক্তি দেখালেন। দাবি করলেন, ২০১৭এ বোর্ড গঠনের সময়ে তাঁরা সকলেই গুরুংয়ের সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তীতে প্রত্যাশা পূরণের আশায় বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু এবার ফের গুরুংয়ের সঙ্গেই লড়তে চান বলে বিজেপি ছেড়ে মোর্চায় যোগ দিলেন, এমনই দাবি করেছেন গুরুং। বিনয় তামাং অবশ্য পালটা হিসেব দিয়ে অভিযোগ তুলছেন, গুরুং মিথ্যে বলছেন। দার্জিলিং পুরসভার ৩২টি আসনের মধ্য়ে ১৮ জন বিনয় তামাংয়ের সঙ্গেই রয়েছেন। তাহলে বাকি ১৭ জন কাউন্সিলরকে গুরুং কলকাতায় কোথা থেকে পেলেন?