অর্ণব আইচ: কারও বাচ্চা লাগলে আমায় বোলো। ব্যবস্থা করে দেব। কড়েয়ার দরগা রোডের একটি ডায়গনিস্টিক সেন্টারের কর্মী তথা রক্ত সংগ্রাহককে টাকার বিনাময়ে শিশু কেনাবেচার ‘ওপেন অফার’ দিয়েছিল লাল্টি দে। পেশায় পুরসভার একশো দিনের কাজ করলেও আসলে মধ্যবয়স্ক লাল্টি আইভিএফ সেন্টারের ডোনারদের এজেন্ট। লাল্টিকেই জেরা করে আনন্দপুরে শিশু পাচার-কাণ্ডের তদন্তে নতুন মোড়।
শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের কর্মী গোলাম আম্বিয়াকে গ্রেপ্তার করল আনন্দপুর থানার পুলিশ। এমনকী, এই চক্রের সঙ্গে এক ‘সারোগেটেড মাদার’ বা গর্ভ ভাড়া দেয়, এমনও একজন মহিলা যুক্ত বলে অভিযোগ। এই অভিযোগে মমতা পাত্র নামে এক মহিলাকেও পুলিশ আটক করে জেরা শুরু করেছে। ওই মহিলা নিজেও ডিম্বানু ডোনার। একটি আইভিএফ সেন্টার অন্য ব্যক্তির শুক্রানু ও তার ডিম্বানু সংগ্রহ করে আইভিএফে নিষিক্তিকরণ করে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে নিষিক্তিকরণের পর ওই মহিলাই তার গর্ভে ভ্রূণ বহনের দায়িত্ব নেয়। ‘সারোগেটেড মাদার’ হিসাবে সে মোটা টাকাও নেয় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, আইভিএফ সেন্টারের ডোনারদের এজেন্টরাই শিশু পাচার চক্রের মূল মাথা। তাদের সহযোগী তথা লিঙ্কম্যান শহরের কিছু ডায়াগনিসটিক সেন্টারের কর্মী ও রক্ত সংগ্রাহক। কলকাতার কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের চিকিৎসক বা নার্স এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত কি না, পুলিশ সেই তথ্যও জানার চেষ্টা করছে।
[আরও পড়ুন: ফোনেই জুটেছে ‘নতুন’ প্রেমিক, কাঁটা সরাতে ‘বুড়ো’ স্বামীকে বালিশ চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টা যুবতীর]
চার লক্ষ টাকা দিয়ে নিঃসন্তান মহিলা কল্যাণী গুহ আন্দপুরের রূপালি মণ্ডলের ২১ দিনের শিশুকন্যাটিকে কিনেছিলেন লাল্টি দে-র কাছ থেকে। এই ঘটনায় আগেই ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই ‘মা’-সহ ৬ মহিলাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বেনিয়াপুকুরের গোলাম আম্বিয়া-সহ ধৃতের সংখ্যা সাত। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও অন্তত গোটা তিনেক আইভিএফ সেন্টার ও বেশ কয়েকজেনর সন্ধান চলছে। ২০১৭ সালে কল্যাণী বেহালার সরশুনার আইভিএফ সেন্টারে চিকিৎসা করাতে আসেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা করান। কিন্তু এরপর তিনি অন্য জায়গায় চলে যান। এদিন পুলিশ ওই চিকিৎসার নথি খতিয়ে দেখে। পুলিশ জেনেছে, বেহালার রাজনৈতিক দলের কর্মী বলে পরিচিত লাল্টি দে মূলত সরশুনার ওই আইভিএফ সেন্টারে শুক্রানু ও ডিম্বানুর ডোনার নিতে যেত। সে সেন্টারের কর্মী ছিল না বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ওই সেন্টারেই আসা রোগীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করত দরগা রোডের প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি বা ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের কর্মী গোলাম আম্বিয়া। কল্যাণীর রক্ত সংগ্রহ করার সময়ই কথায় কথায় গোলাম তাঁকে টাকার বিনিময়ে বাচ্চা পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।
মেদিনীপুরের কল্যাণী গুহ প্রস্তাবে রাজি হলে গোলাম তাঁর সঙ্গে লাল্টির যোগাযোগ করায়। লাল্টি কল্যাণীর কাছ থেকে আগাম টাকা নেয়। চক্রের অন্যদের মারফত সেই খবর পাটুলির রূপা দাসের কাছে আসে। রূপার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ‘সারোগেটেড মাদার’ মমতা পাত্রর। আয়া সেন্টারের সূত্রে পরিচয় হওয়া রূপালি মণ্ডলকে টাকার বিনিময়ে মা হওয়ার প্রস্তাব দেয় ওই মহিলা। ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ‘মা’ হতে রাজি হয় রূপালি। সে আইভিএফ পদ্ধতিতে না কি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই মা হয়, সেই তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।