সোমনাথ রায়, শ্রীনগর: চলতি মাসেই বিধানসভা নির্বাচন জম্মু ও কাশ্মীরে। তার আগে রক্তাক্ত উপত্যকা। জঙ্গিদের সঙ্গে ভয়ংকর গুলির লড়াইয়ে শহিদ ভারতীয় সেনার দুই জওয়ান। গুরুতর জখম আরও দুই। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁদের। গতকাল রাতভর কিস্তওয়ার জেলায় জেহাদিদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলেছে সেনাবাহিনীর। এখনও জঙ্গিদের খোঁজে চলছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। পাশাপাশি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বারামুলাও। সেখানে এনকাউন্টারে খতম হয়েছে তিন জঙ্গি। জারি রয়েছে অভিযান। ভূস্বর্গে জোর কদমে চলছে ভোটের প্রস্তুতি। আর এই নির্বাচন বানচাল করতে সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিরা।
সেনা সূত্রে খবর, ভোটমুখী কাশ্মীরে বড়সড় নাশকতার ছক কষছে জঙ্গিরা। নির্বাচন ভেস্তে দিতে তৎপর তারা। কিন্তু সেই ছক ধরে ফেলেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। শুক্রবার খবর মেলে কিস্তওয়ার জেলায় লুকিয়ে রয়েছে জেহাদিরা। তার পরই যৌথ অভিযানে নামে সেনাবাহিনী ও কাশ্মীর পুলিশ। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি। জানা গিয়েছে, জওয়ানদের দেখে জঙ্গলের দিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে জঙ্গিরা। তখনই চার জওয়ান গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুজনের মৃত্যু হয়। বাকি দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আকাশপথে সেনা হাসপাতালে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেনার তরফে জানানো হয়, কিস্তওয়ারে জঙ্গিদের নিকেশ করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন জুনিয়র কমিশনড অফিসার বিপন কুমার এবং অরবিন্দ সিংহ।
অন্যদিকে, এদিন রাতেই বারামুলা জেলাতে পৃথক তল্লাশি অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানেও রাতভর জঙ্গিদের সঙ্গে জওয়ানদের গুলির লড়াই চলেছে। আজ সকালেও সেখানে চলছে অভিযান। নিকেশ হয়েছে তিন জঙ্গি। এর আগে চলতি সপ্তাহের বুধবার কাঠুয়া-উধমপুর সীমান্ত এলাকাতে জওয়ানদের গুলিতে খতম হয়েছিল দুই জঙ্গি। ফলে কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত উপত্যকা।
উল্লেখ্য, ১০ বছর পর কাশ্মীরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিধানসভা নির্বাচন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর ৩ দফায় ভোটগ্রহণ হবে। ফলাফল জানা যাবে ৪ অক্টোবর। এই নির্ঘণ্ট জানার পরই খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে ভূস্বর্গে। ভোটের লড়াইয়ের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এর মাঝেই উপত্যকা উত্তপ্ত করে রেখেছে জঙ্গিরা। লোকসভা নির্বাচনের আগেও জম্মু ও কাশ্মীরকে রক্তাক্ত করেছে তারা। প্রাণ হারিয়েছেন সাধারণ মানুষ। শহিদ হয়েছেন জওয়ানরা। কিন্তু জঙ্গিদের পালটা জবাব দিয়ে সব পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে সেনা।
বলে রাখা ভালো, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে পাকিস্তান। ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করিয়ে নাশকতার চেষ্টা করছে তারা। আর এক্ষেত্রে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মদতের পাশাপাশি পাঞ্জাবের খালিস্তান জঙ্গিদেরও নানাভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। তাই চিনের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করে অস্ত্র ও মাদকও ভারতে ঢোকানো হচ্ছে। সম্প্রতি এক গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সন্ত্রাসবাদী হামলার লঞ্চিং প্যাডগুলো সক্রিয় করেছে পাক সেনা। সেখান থেকে জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবার জঙ্গিরা ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।