ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: লেগেই রয়েছে শিশুমৃত্যু। বৃহস্পতিবারও প্রাণ গেল দুই শিশুর। বি সি রায় হাসপাতালে ভরতি ছিল ওই দুই খুদে। তাদের মধ্যে একজন ফুলবাগান এবং আরেকজন রাজারহাটের বাসিন্দা। দু’জনেই ন’মাস বয়সি। জ্বর, সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভরতি ছিল তারা। একের পর এক শিশুমৃত্যুতে উদ্বিগ্ন খুদের পরিবারের লোকজন। উল্লেখ্য, মঙ্গল ও বুধবার মিলিয়ে রাজ্যে পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে বি সি রায় শিশু হাসপাতাল ও আরজি করে একটি করে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দু’টি এবং বধর্মানের কাটোয়ায় একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার সকালে শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্যরা বি সি রায় শিশু হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে যান। দুই হাসপাতালে শিশুদের ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। অধ্যক্ষর সঙ্গে আলোচনা করেন। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ও পরামর্শদাতা অনন্যা চক্রবর্তী পরে জানান, দুই হাসপাতালেই শিশুদের চিকিৎসা পরিকাঠামো যথেষ্ট ভাল। ভরতির সংখ্যাও কমছে। আউটডোরেও রোগী কমছে। তবে মেডিক্যাল কলেজের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল। মূলত, রাজ্যের দু’টি হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি বলেই কমিশন সারপ্রাইজ ভিজিট করে। আবার ওইদিন বিকেলে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী। অসুস্থ বাচ্চাদের মা-বাবাকে আশ্বস্ত করেন। একটি গুরুতর অসুস্থ শিশুকে ভরতির ব্যবস্থা করেন।
[আরও পড়ুন: ‘হোলিতে ছুটি না পেলে বউ খুব রেগে যাবে’, পুলিশকর্মীর ছুটির আবেদন নেটদুনিয়ায় ভাইরাল]
বাচ্চাদের জ্বর-শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমছে, কলকাতা-সহ রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য দেখে এমনটাই অভিমত স্বাস্থ্যদপ্তরের। তবে কোনওরকম শৈথিল্যের অবকাশ নেই। মেডিক্যাল কলেজ থেকে ব্লকস্তর পর্যন্ত সব হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক রাত-দিন খোলা। পালা করে কাজ করছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। রাজ্য স্বাস্থ্য অধির্কতা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেছেন,‘‘জ্বর-শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বা শ্বাসনালির সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভরতির সংখ্যা কমছে। কমছে আউটডোরে ভিড়।’’ তবে একইসঙ্গে তিনি সর্তক করে বলেছেন,‘‘ভাইরাসের প্রকোপ কমে। কিন্তু ভাইরাস কখনও নির্বংশ হয় না। তাই সতকর্তাই শেষ অস্ত্র। ছোটদের সর্বক্ষণ নজরে রাখতে হবে। মায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’’ শিশুদের সংক্রমণ যে কমছে, তা স্পষ্ট করেছেন ফুলবাগানের বি সি রায় শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. দিলীপ পাল। দিলীপবাবুর কথায়,‘‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর হাসপাতালে গড়ে ৭০টি করে শিশু শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ভরতি হত। আউটডোরে গড়ে দেড় হাজার শিশুর চিকিৎসা হত। এখন ভরতি কমে ৪০ ও আউটডোরে হাজারখানেক শিশুর চিকিৎসা হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালের মতো বেসরকারি হাসপাতালেও ‘এআরআই’ রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। চিত্তরঞ্জন শিশুসদনে দশ দিন আগেও দিনে ১৬-১৭টি শিশু ভরতি হত। এখন তা কমে হয়েছে দিনে ৭-৮টি। বেসরকারি পিয়ারলেস হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা কমছে। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের ডা. জয়দেব রায়ের কথায়, ‘‘তাপমাত্রা যত বাড়বে, ততই ভাইরাসের সংক্রমণ কমবে। তবে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।”