অর্ণব আইচ: সোমবার সকালের পর রাতেও উত্তপ্ত হল ভবানীপুর (Bhabanipur)। তৃণমূল সমর্থক সন্দেহে দুই কলেজ পড়ুয়াকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে একদল অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বিজেপি (BJP) আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রাতেই ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়।
এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, আক্রান্ত দুই যুবকের নাম সত্যদীপ মল্লিক এবং তাঁর সঙ্গী সিদ্ধার্থ যোশী। দুই যুবকই ভবানীপুর থানা এলাকার বিজয় বোস রোড 8 নম্বর কেএমসি কটেজের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, সত্যদীপ ও তাঁর বন্ধু সিদ্ধার্থ স্কুটিতে করে মাঝরাতে ওষুধ কিনতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ভবানীপুর থানা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে তাঁদের পথ আটকায় একটি কালো রংয়ের গাড়ি। গাড়িতে ছিল ৭-৮ জন। তাদের মধ্যে দু’জন গাড়ি থেকে নেমে সত্যদীপ ও সিদ্ধার্থকে তৃণমূল সমর্থক সন্দেহে উইকেট দিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ।
[আরও পড়ুন: রাজ্য কমিটির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা বিজেপি নেতা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের, তুঙ্গে দলত্যাগের জল্পনা]
স্কুটিচালক সিদ্ধার্থ কোনওক্রমে হামলার হাত থেকে বাঁচলেও, রক্ষা পাননি সত্যদীপ। অভিযোগ, সত্যদীপের থুতনিতে উইকেট দিয়ে সজোরে আঘাত করে এক যুবক। তারপরই এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয় অভিযুক্তরা। রাতেই ভবানীপুর থানায় অভিযোগ জানান আক্রান্তরা। তবে, অভিযুক্তরা বিজেপি আশ্রিত বলেই অনুমান করছেন আক্রান্তরা।
এদিকে হাই ভোল্টেজ ভোটের আগে সর্তক কলকাতা পুলিশ। ভবানীপুর চত্বর মুড়ে ফেলা হচ্ছে পুলিশি নিরাপত্তায়। ভোটের দিন গোলমাল এড়াতে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা লালবাজারের। এলাকায় লালবাজারের কর্তারা ছাড়াও থাকছেন ১১ জন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। এদিকে, নির্বাচন কমিশনের বিশেষ টিম পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করল বিপুল পরিমাণ টাকা। নাকা চেকিংয়ে দু’দফায় উদ্ধার হয়েছে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, উপনির্বাচনের (WB By-Election) আগেই দক্ষিণ কলকাতায় বাড়ানো হয়েছে নাকা চেকিং। প্রত্যেক রাতেই বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোনও সন্দেহজনক ব্যক্তি বা গাড়ি দেখলেই দাঁড় করিয়ে চলছে জেরা। লালবাজার সূত্র জানিয়েছে, উপনির্বাচনের একদিন আগে থেকেই ভবানীপুরে অতিরিক্ত পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুরো এলাকাটি ভাগ করা হয়েছে সেক্টরে। ভোটের দিন তিনটি ডিভিশনের ডিসি ছাড়াও সেক্টরগুলির দায়িত্বে থাকছেন আরও আটজন ডিসি পদমর্যাদার পুলিশকর্তা। এ ছাড়াও তিনজন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ওই কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন।
[আরও পড়ুন: যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্যে আরও জোর রেলের, বিশ্রামের জন্য হাওড়ায় তৈরি হচ্ছে বিলাসবহুল ‘কাচঘর’]
পুরো এলাকাজুড়ে টহল দেবে ২৩টি আরটি মোবাইল, ৯টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, ১৩টি কুইক রেসপন্স টিম, ২২টি সেক্টর মোবাইল টিম। এ ছাড়াও ৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকছে পুলিশ পিকেট। পাঁচ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নির্বাচন কেন্দ্র ও বুথগুলিতে থাকছে। পুলিশের সঙ্গে টহলদার গাড়িতে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। প্রত্যেকটি থানার পক্ষ থেকে বিশেষ মোবাইল পেট্রোল থাকছেই। এ ছাড়াও থানা ও ট্রাফিক গার্ডগুলির পক্ষ থেকেও বাইকে করে অতিরিক্ত সংখ্যক সার্জেন্ট ও পুলিশ আধিকারিকরা অলিগলিতে টহল দেবেন। কেন্দ্রের যে পয়েন্টগুলিতে গোলমাল হতে পারে বলে খবর দিয়েছেন গোয়েন্দারা, সেই পয়েন্টগুলির উপর বেশি নজরদারি টহলদার পুলিশের। কোথাও গোলমালের খবর পেলে যাতে কয়েক মিনিটের মধ্যে বাহিনী সেখানে হাজির হতে পারে, সেই ব্যবস্থাই করা হয়েছে।
এদিকে, রাতে খিদিরপুরের কাছে ড. সুধীর বোস রোড ও ডায়মন্ডহারবার রোডের সংযোগস্থলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ একটি গাড়ি আটকায়। উদ্ধার হয় চার লক্ষ টাকা। যদিও গাড়ির আরোহীরা দাবি করেন যে, বেসরকারি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এমন কয়েকজনকে এই টাকা দিতে যাচ্ছিলেন।
এদিকে, মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় চৌরঙ্গি লেন ও সদর স্ট্রিটের সংযোগস্থল থেকে হুগলির উত্তরপাড়ার সঞ্জয় শর্মা ও উত্তর কলকাতার নলিনী শেঠ রোডের বাসিন্দা পুবন পারিককে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫৫০ টাকা। কোথায় ওই টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই ব্যাপারে কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায়, তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।