ধীমান রায়, কাটোয়া: পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhman) কাটোয়ার দাঁইহাটের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত চার আত্মীয়। তাদের মধ্যে পিসতুতো দাদা ও পিসতুতো জামাইবাবুকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনাল আদালত।বাকি দুই অভিযুক্তর মধ্যে রয়েছে নাবালিকার পিসেমশাই, তাকে তিনবছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্যাতিতার নিজের দাদাও রয়েছে অভিযুক্তের তালিকায়। তবে ঘটনার সময় সে নাবালক থাকায় দোষী সাব্যস্ত করলেও সাজাঘোষণা স্থগিত রেখে তাকে জুভেইনাল আদালতে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
কাটোয়া থানার দাঁইহাট শহরের স্কুলমোড়ের বাসিন্দা ওই নাবালিকা। ২০১৮ সালের ২০ মার্চ কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। যদিও বর্তমানে তিনি সাবালিকা। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে মেয়েটির মায়ের মৃত্যু হয়। তার বাবা একটি দোকানে কাজ করতেন। মেয়েটির বাবা তাঁকে দক্ষিনেশ্বরে পিসির বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সেখানেই স্কুলে ভরতি হয়েছিলেন তিনি। বছর দুয়েক সেখানে থাকার পর দাঁইহাট ফিরে আসেন।
[আরও পড়ুন: Coronavirus Update: গত ২৪ ঘণ্টায় সামান্য কমল রাজ্যের সংক্রমণ, মৃত্যু ২৮ জনের]
জানা যায়, দাঁইহাটে ফেরার পর একদিন কিশোরী নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁর বাবা পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডাইরি করার পর মেয়েটি নিজেই কাটোয়া থানায় হাজির হন। জানান, স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে তিনি পালিয়েছিলেন। মেয়েটি যাতে মূলস্রোতে ফিরে ভালভাবে পড়াশোনা করে সেই উদ্দেশ্যে কাটোয়া চাইল্ডলাইনের প্রতিনিধিরা তার কাউন্সেলিং শুরু করে। তখনই কাটোয়া চাইল্ডলাইনের প্রতিনিধিদের কাছে নাবালিকা জানায় তার বড়পিসির বাড়িতে থাকাকালীন তাকে জোর করে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে পিসতুতো দাদা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস এবং পিসতুতো জামাইবাবু শংকর রায়।
মেয়েটি আরও জানায় একাধিকবার সেখানে ধর্ষণের (Rape) শিকার হয়ে সে বাধ্য হয়ে দাঁইহাট ফিরে আসে। এখানেই শেষ নয়, দাঁইহাটে আসার পর নিজেদের বাড়িতে আরও এক পিসেমশাই প্রদীপ সরকার ও তাঁর নিজের দাদাও তাঁকে যৌন নিগ্রহ করে বলে চাইল্ডলাইনের কাছে প্রথম জানান নির্যাতিতা। তারপরেই চাইল্ডলাইন তৎপর হয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে। নাবালিকা এফআইআর দায়ের করে। তারপরেই গ্রেফতার করা হয়েছিল কিশোরীর দাদা ও ছোট পিসেমশাই প্রদীপ সরকারকে। যদিও পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়।
ওই মামলায় বৃহস্পতিবার চারজনকেই দোষী স্যবস্ত করে কাটোয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। এদিন শুক্রবার বিচারক সুকুমার সূত্রধর সাজা শোনান। বিচারক ওই কিশোরীর পিসতুতো জামাইবাবু উত্তর ২৪ পরগনার বাগুইআটির বাসিন্দা শংকর রায় ও পিসতুতো দাদা দক্ষিনেশ্বরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বিশ্বাসকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা শোনান। পাশাপাশি পিসেমশাই দাঁইহাটের বাসিন্দা প্রদীপ সরকারকে তিনবছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। কিশোরীর দাদা যেহেতু ঘটনার সময় নাবালক ছিল তাই আসামীপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে তার সাজাঘোষণা স্থগিত রাখে আদালত। অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবী জানান, এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।