ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বামেদের সঙ্গে আলোচনার জট কেটেও যেন কাটছে না কংগ্রেসের। আসন্ন লোকসভা ভোটে (2024 Lok Sabha Election) শরিকদের ‘জেদাজেদি’তে সিপিএম (CPM) পড়েছে টানাপোড়েনে। যার জেরে কংগ্রেসকেও তারা কোনও জবাব দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তাদের জোট-চর্চা আপাতত দোলযাত্রা (Dol Yatra) পর্যন্ত স্থগিত রাখছে। এর মধ্যে সিপিএম শনিবারই আরও কয়েকটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিতে পারে। তাতে বাম শরিকদের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা আরও স্পষ্ট হবে। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গেও জোট-পর্ব আরও সহজ হতে পারে বলে আশা প্রদেশ নেতৃত্বের। তার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে প্রদেশ কংগ্রেস (Congress)।
এই পরিস্থিতি হবে, তা আঁচ করে প্রথম থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট আলোচনা চেয়েছিল সিপিএম। কিন্তু গোড়ায় কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোটে আগ্রহী ছিল। ফলে সিপিএমের সঙ্গে তারা আলোচনা চায়নি। পরে পরিস্থিতি বদলানোর পরও AICC-সিপিএমের সঙ্গে ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ জোটে যেতে আগ্রহী ছিল না বলে জানাচ্ছে AICC-র একটি সূত্র। সেই কারণেই প্রার্থী বাছাই বা বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট নিয়ে কংগ্রেসের এত গড়িমসি ছিল বলে খবর।ফলে দলে এই প্রশ্নও উঠেছিল যে, রাজ্যে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেস কেন জোট করছে? ইন্ডিয়া জোটে থেকেও রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট এড়িয়েছে তৃণমূল। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) লাগাতার তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন বলে অভিযোগ তুলে বাংলায় কংগ্রেসের হাত তৃণমূল ধরবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই কংগ্রেস হাইকমান্ড চাপে পড়ে যায়। তাদের বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব হাইকমান্ডকে যে যুক্তি দিয়েছে তাতে জানা গিয়েছে, জোট ছাড়া বাংলায় ন্যূনতম আসন প্রাপ্তিও অসম্ভব। তৃণমূলের সঙ্গে আসন রফা হলেই সব থেকে কার্যকরী জোট হত। তা যখন হল না, সিপিএমই সই। সেই কারণেই কংগ্রেস নিরুপায় হয়েও সিপিএমের হাত ধরছে বলে এখনও পর্যন্ত খবর।
[আরও পড়ুন: লাল ট্রলিব্যাগ চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত! চেন খুলতেই বেরিয়ে এল দেহ]
২০১৬ সাল থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে বামফ্রন্ট। তবে সেই জোট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ফ্রন্ট শরিকদের মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সিপিএমকে। সিপিএম বা সিপিআই চাইলেও আরএসপি সেভাবে খোলাখুলি কংগ্রেসের সমর্থনের কথা বলেনি। একই অবস্থানে ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকও। শেষে নিজেদের কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার করে দেয় ফরওয়ার্ড ব্লক। এই পরিস্থিতিতে বামফ্রন্ট শরিকদের মধ্যে অশান্তি এদিনও বজায় রয়েছে। এর মধ্যেই এআইসিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রার্থীতালিকা নিয়ে এত গড়িমসি হওয়ার মূল কারণ কংগ্রেস হাইকমান্ডের তৃণমূল-প্রীতি। দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “হাইকমান্ড শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে জোট হবে ধরে নিয়েই এগোচ্ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান আমরা হাইকমান্ডকে জানিয়েছিলাম। তার পরও তারা অপেক্ষায় ছিল। সিপিএমের সঙ্গে জোটে তারা আগ্রহী ছিল না।” তাহলে কেন সিপিএমের সঙ্গে যাচ্ছে কংগ্রেস? ওই রাজ্য নেতার কথায়, “কারও সঙ্গে জোট না হলে কংগ্রেসের এই মুহূর্তে বাংলায় লড়াই করা কঠিন। আর সিপিএমের সঙ্গে একটা স্বাভাবিক জোট আমাদের রয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়েই হাইকমান্ড সিপিএমের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: মৃতদেহর মতো সাদা চাদরে ঢেকে চোলাই মদ পাচারের চেষ্টা, শ্মশানে হানা আবগারি দপ্তরের]
শুক্রবার পর্যন্ত খবর, নতুন করে বদল না হলে দার্জিলিং (Darjeeling) আসনে বিনয় তামাংকেই প্রার্থী করছে কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ডের তাঁকে সমর্থন জানানোর কথা। সিপিএম আবার সেখানে নিরপেক্ষ প্রার্থী হিসাবে অজয়কেই চাইছে। মোট ১২টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়ার কথা সিপিএমের। ফলে জট থাকছে আরও ৩টি আসন নিয়ে। বসিরহাট আসনটি সিপিআই (CPI) ছাড়লে সেখানে প্রার্থী দেবে সিপিএম। সেক্ষেত্রে বনগাঁ ছাড়া হবে কংগ্রেসকে। আবার বসিরহাট সিপিএম না পেলে বনগাঁ নিজেরা রেখে বারাকপুর (Barrackpore) কংগ্রেসকে ছাড়তে পারে সিপিএম। এছাড়া আরও দুটি আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হতে পারে। সবটা নিয়েই এখনও দর কষাকষি চলছে। আলোচনা চলছে ডায়মন্ড হারবার আর উলুবেড়িয়া নিয়েও।