ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রাজনীতির সঙ্গে যোগ বহুদিনের। যুদ্ধের ময়দানও অচেনা নয়। কিন্তু তবুও চব্বিশের নির্বাচনে (2024 Lok Sabha Election) বাংলার শাসক শিবিরের হয়ে দিল্লির লড়াইয়ে নামাটা তাঁদের কাছে একেবারে নতুন। তার চেয়েও বেশি এই ভূমিকায় নিজেদের দেখতে পাওয়া বিস্ময়ের। রবিবার ব্রিগেডের ময়দান থেকে রাজ্যের ৪২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তার মধ্যে রয়েছেন নতুন বেশ কিছু মুখ। কেউ একেবারে নবাগত, কেউ আবার বিধায়ক পদে আসীন। ব্রিগেড সভা শেষের পর কান পাতলে শোনা যাচ্ছে একটাই বক্তব্য, তাঁদের যে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করা হবে, তা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না। রবিবার ব্রিগেডের সভা শুরুর কিছুক্ষণ আগেই তাঁদের ‘সারপ্রাইজ’ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে সতর্কবাণী – লড়তে হবে, জিততে হবে।
শনিবার সন্ধে পর্যন্ত কেউ কিছু জানতেন না। এমনকী রবিবার সকালেও বুঝতে পারেননি যে সামনে বড় পরীক্ষা। শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিধায়ক, দলের নেতাদের ফোন করা হয় তৃণমূলের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিস থেকে। বলা হয়, রবিবার বেলা ১১টার মধ্যে পৌঁছে যেতে হবে ব্রিগেডে। সভামঞ্চের পিছনে গ্রিন রুমে দেখা হবে। সেইমতো তাঁরা পৌঁছে যান। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলের উদ্দেশে বলা হয় মাত্র তিনটি বাক্য – লোকসভায় পাঠানো হচ্ছে। লড়তে হবে। জিততে হবে।
[আরও পড়ুন: ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর খবরে সিলমোহর, লোকসভায় তমলুকের প্রার্থী দেবাংশু]
কোচবিহারের (Cooch Behar) তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া জানান, শনিবার রাতে ফোন করে জানানো হয় যে রবিবারের ব্রিগেড সভায় প্রথম বক্তা তিনি। সময়মতো যেন পৌঁছে যান। সেখানে গ্রিন রুমে গেলে দেখতে পান, তাঁর মতোই আরও বেশ কয়েকজন ওখানে বসে। প্রথমে অভিষেক এসে দেখা করেন তাঁদের সঙ্গে। পরে গ্রিন রুমে যান মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তখনই জানতে পারেন, সকলেই প্রার্থী হচ্ছেন। এবার লোকসভার লড়াইতে নামতে হবে। আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) প্রকাশ চিক বরাইক, জলপাইগুড়ির নির্মলচন্দ্র রায়েরও প্রায় একই বক্তব্য। কেউই টের পাননি যে তাঁদের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে, যতক্ষণ না মমতা ও অভিষেক তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
[আরও পড়ুন: রামনবমীর ছুটিতে প্রবল আপত্তি কবীর সুমনের, সোশাল মিডিয়ায় গর্জে উঠলেন শিল্পী?]
এতে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন জলপাইগুড়ির নির্মলচন্দ্র রায়। তাঁর কথায়, ”আমি প্রথমে ব্রিগেডের মঞ্চে বিধায়কদের জন্য নির্দিষ্ট করা জায়গায় বসেছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে আমাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রিন রুমে। অভিষেক আসেন প্রথমে। তার পর ম্যাডাম আসেন। জানানো হয় যে আমাকে জলপাইগুড়ি থেকে প্রার্থী করা হচ্ছে। আমি তো শুনে অবাক।”
বনগাঁ (Bongaon) কেন্দ্রের প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ”২০২২ সালে আমি যখন বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরেছিলাম, তখনই চেয়েছিলাম, বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারণ করেন। পরে অভিষেক জানান যে ভালো করে কাজ করতে হবে। বড় কিছু অপেক্ষা করছে। কিন্তু বুঝতে পারিনি যে লোকসভা ভোটের টিকিট পাব।” নতুন প্রার্থীদের কমবেশি একই অভিজ্ঞতা। অর্থাৎ তাঁরা সকলেই সারপ্রাইজ পেয়েছেন এবং একইসঙ্গে নিয়েছেন অবশ্যই লড়ে জিতে আসার চ্যালেঞ্জও। তবে সূত্রের খবর, পুরনো যেসব জনপ্রতিনিধিদের উপর ফের ভরসা রাখা হয়েছে, তাঁরা মোটের উপর নিশ্চিত ছিলেন প্রার্থী হওয়া নিয়ে। মমতা-অভিষেকের নির্দেশ অনুযায়ী, সোমবার থেকেই প্রার্থীদের প্রচারে নামতে হবে।