সুমিত বিশ্বাস ও সুনীপা চক্রবর্তী, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম: হলুদ ঝড়ে প্রখর গ্রীষ্মেও অকাল বসন্ত এসেছিল জঙ্গলমহলে! কিন্তু সে বসন্ত যে 'কৃত্রিম', তা ভোটের প্রাক্কালে বুঝতে পারেনি বনমহল। বুঝতে পারেনি জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক মহলও। তাই হলুদ কাঁটা 'কন্টক' হল না। গর্জনই সার। জঙ্গলমহল জুড়ে ভোট টানতে পারলেন না কুড়মি (Kurmi) প্রার্থীরা। আশা জাগিয়েও মুখ থুবড়ে পড়লেন জঙ্গলমহলে জাতিসত্তা আন্দোলনের মুখ আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) ও পুরুলিয়া কেন্দ্রের কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো। প্রাপ্ত ভোট লাখ পার করতে পারেননি। পঞ্চায়েত ভোটে কুড়মি সমর্থিত নির্দলরা যে ভোট পেয়েছিলেন তার চেয়ে অবশ্য বেশি ভোট পান। সহযোগী 'হিতমিতান' এগিয়ে নিয়ে যেতে পারল না তাঁকে। তবে বাঁকুড়া, মেদিনীপুরে কুড়মি কাঁটা ফ্যাক্টর না হলেও সেখানে ঘাসফুল ফুটেছে। কিন্তু পুরুলিয়ায় তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর মুখে চওড়া হাসি আর দেখা গেল না।
গত পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের নিরিখে পুরুলিয়া (Purulia) কেন্দ্রে কুড়মিদের ভোট ছিল ৬৮,১৯৮। কিন্তু চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (2024 Lok Sabha Election) মূল মানতা আটকে গেলেন লাখের কাছাকাছি ভোটে। আর ঝাড়গ্রামে (Jhargram) তো কুড়মি ঐক্যই হয়নি। ভোট টানবে কোথায়? আদিবাসী কুড়মি সমাজ সমর্থিত ঝাড়খণ্ড পিপলস পার্টির প্রার্থী সূর্য সিং বেসরা প্রায় ২০ হাজার ভোট পেলেন। অন্যদিকে, এই কেন্দ্রে আদিবাসী নেগাচারী, কুড়মি সমাজের প্রার্থী বরুণ মাহাতো ১৫ হাজার ভোটও পেলেন না। বাঁকুড়া (Bankura) কেন্দ্রে কুড়মি প্রার্থী সুরজিৎ সিং কারমালি প্রায় ২০ হাজার ভোট পেলেও মেদিনীপুরের কুড়মি প্রার্থী কমলেশ মাহাতো ৫ হাজার ভোটও পেরতে পারেননি। এই দুটি আসন বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর তৃণমূল ফিরে পেলেও পুরুলিয়া ফিরে পেল না। স্রেফ কুড়মি কাঁটা কাজ না করায়।
[আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ, বাংলায় অভিষেক, দেশে রাহুল, তিন ‘যুবরাজ’ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিরোধীদের]
পুরুলিয়ার (Purulia) কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো ভোটের আগের দিন আশঙ্কা করেছিলেন, সহযোগী সংগঠন 'হিতমিতান' কী করবে? ভোটের ফল দেখেই বোঝা গেল কুড়মিদের সহযোগী সংগঠনগুলি কুড়মি প্রার্থীর হয়ে ভোট টানতে পারল না। অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, "আমরা পর্যালোচনা করব। বিশ্লেষণ করব কেন এমন হল। তবে আদিবাসী তালিকাভুক্তের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তা আরও জোরদার হবে।" জাতিসত্তার জন্যই কুড়মিরা এবার লোকসভা ভোটে প্রার্থী দেয়। যদিও পঞ্চায়েত ভোটে কুড়মিদের কয়েকটি সংগঠন প্রার্থী দিয়েছিল। আদিবাসী (Tribal) কুড়মি সমাজের মতো সংগঠন অবশ্য নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করে।