ধীমান রায়, কাটোয়া: তফসিলি জাতি পরিবারের মেয়েকে দেখাশোনা করে বিয়ে দিয়ে বধূ হিসাবে ঘরে তোলা হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে নববধূকে মাঝেমধ্যেই ‘নিচু জাত’-এর বলে অপমান করা হত। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে বিয়ের পাঁচমাসের মধ্যেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন বধূ। কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে এহেন মৃত্যুর ঘটনায় ছড়ায় চাঞ্চল্য।
রবিবার সন্ধেয় কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে অনিন্দিতা কুণ্ডু (হালদার) নামে ২৫ বছরের ওই বধূকে ঝূলন্ত অবস্থায় শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যু হয়েছে শুনেই দেহ ফেলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সোমবার বিকেলে মৃতার বাবা গৌতম হালদার বধূর শাশুড়ি, ননদ ও স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের জাতীয় দলের স্বীকৃতি বাতিল, নির্বাচন কমিশনের ‘কোপে’ RSP, CPI-ও]
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অগ্রদ্বীপ হাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা মহাদেব কুণ্ডু ও শিবাণী কুণ্ডুর ছেলে মনোজিতের সঙ্গে পাঁচমাস আগে বিয়ে হয় অনিন্দিতার। তাঁর বাপেরবাড়ি নদিয়ার নৃসিংহপুর এলাকায়। তাঁর সম্পর্কে দাদা অশোক হালদার বলেন, “আমরা তফসিলি পরিবারের। মনোজিতরা সাধারণ জাতিভুক্ত। একটি বিয়েবাড়িতে আমার বোনের সঙ্গে মনোজিতের পরিচয় হয়েছিল। তারপর মনোজিত বিয়ের প্রস্তাব দেয়। দুই পরিবারের মধ্যে দেখাশোনা করেই বিয়ের আয়োজন হয়। কিন্তু বিয়ের পরেও আমার বোনকে ‘নিচু জাতের’ বলে কটাক্ষ করত শ্বশুরবাড়ির লোকজন।” মনোজিত গুজরাটে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বিয়ের পর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে গুজরাটে চলে যান। মাস দেড়েক আগে মনোজিত তাঁর মায়ের অসুস্থতার কারণে স্ত্রীকে অগ্রদ্বীপে পাঠিয়ে দেন। সেই থেকেই অনিন্দিতা অগ্রদ্বীপে ছিলেন বলে জানা যায়।
রবিবার অনিন্দিতা ও তাঁর ননদ মিলে শিবাণীদেবীকে নিয়ে বর্ধমানে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর সন্ধেয় অনিন্দিতাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মৃতার দাদার দাবি, “রবিবার আমার বোনের সঙ্গে ওর শাশুড়ি ও ননদের অশান্তি হয়। তখন মনোজিত ভিডিও কল করে আমার বোনকে অপমানজনক কথা বলেন। শাশুড়ি, ননদের অপমানের পাশাপাশি স্বামীর কাছেও অপমানিত হয়ে এই ঘটনা ঘটায় অনিন্দিতা। এমনটা প্রতিবেশীদের কাছে জানতে পেরেছি।” মৃতার বাবা গৌতমবাবু জানান, বিয়ের পরেও তাঁর জামাই কিছু টাকা দাবি করেছিলেন। সেই টাকাও দেওয়া হয়েছিল। তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পর তদন্তে নেমেছে পুলিশ।