সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুম্বইয়ে ২৬/১১ সন্ত্রাসবাদী হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তাহাউর হুসেন রানাকে হাতে পেতে চলেছে ভারত। ২৬/১১ কাণ্ডের অন্যতম প্রধান চক্রী ৫৮ বছরের রানা এখন শিকাগোয় জেল খাটছে। ২০১৩ সালে তাঁকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় মার্কিন আদালত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই ও এএফপি জানিয়েছে, কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ রানাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ-র হাতে তুলে দেবে আমেরিকা। অর্থাৎ আর দু’বছর পরেই রানাকে হাতে পেতে চলেছে ভারত। তাকে হাতে পেলে এটা হবে ভারতের প্রাইজ ক্যাচ। ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদী রানার অপরাধ কোনওভাবেই জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি নেতা মাসুদ আজহার, হিজবুল নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিন এবং লস্কর-ই-তইবার নেতা হাফিজ সইদের থেকে কম নয়।
[কম্পিউটার-মোবাইলে নজরদারি ইস্যুতে কেন্দ্রকে নোটিস সুপ্রিম কোর্টের]
এই মুহূর্তে ‘শাটডাউন’ চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাহাউর হুসেন রানার প্রত্যর্পণ কবে কীভাবে হবে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি মার্কিন বিদেশ দপ্তর ও বিচার বিভাগ। ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস এমনকী রানার আইনজীবীও মুখ খুলতে রাজি হননি। এক কথায় রানার প্রত্যর্পণের গোটা ব্যাপারটি নিয়ে প্রচণ্ড গোপনীয়তা অবলম্বন করছে সব পক্ষই। কারণ বিষয়টি আন্তর্জাতিক ইস্যু এবং তা স্পর্শকাতর। গোটা প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ট্রাম্প প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, “এখানে হাজতবাসের মেয়াদ শেষ হোক আগে। তার পর রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। ভারত এবং আমাদের তরফে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে উদ্দেশ্য সফল হয়। তবে দুই দেশেই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। তাই প্রত্যর্পণ নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায় না দিল্লি ও ওয়াশিংটন।”
২৬/১১ কান্ডে আরেক ষড়যন্ত্রী ডেভিড কোলম্যান হেডলি ওরফে দাউদ গিলানির সঙ্গে ছিল তার দুর্দান্ত বোঝাপড়া। হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিতর্কিত কার্টুন ছাপায় ২০০৮ সালে ডেনমার্কের সংবাদপত্র অফিস ‘জিল্যান্ডস পস্টেন’-এর দপ্তরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে মার্কিন পুলিশ। তাদের টানা জেরা করার সময় তাদের কথার সূত্র ধরেই মুম্বই হামলায় রানার জড়িত থাকার ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। জানা গিয়েছিল, পাকিস্তানি চর হিসাবে রানা ২৬/১১ কাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। আজমল কাসভদের হামলাকে কার্যকর করতে তিলে তিলে নিখুঁত ছক কষেছিল সে। আদতে সে ছিল পাক সেনাতে কর্মরত এখজন চিকিৎসক। পরে কানাডার নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশে বাস করতে শুরু করেছিল। কিন্তু সে ছিল ‘অসরকারিভাবে’ নিযুক্ত আইএসআইয়ের একজন বিশ্বস্ত চর। অর্থাৎ বেতনভুক না হলেও সব রকমের সুবিধা ও মদত সে চাইলেই আইএসআই থেকে পেত। জেরা চলাকালীন মুম্বই হামলার সঙ্গে রানার যোগ ধরা পড়ে। জানা যায়, হেডলির সঙ্গে মিলে মুম্বইয়ে একটি ভুয়ো অভিবাসন দপ্তর খুলেছিল সে। মানুষকে কানাডা ও আমেরিকার ভিসা পাইয়ে দেওয়ার আড়ালে গুপ্তচর নিয়োগ করে ভারতে হামলার ছক কষছিল তারা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে, শুধু হেডলি নয়, হামলার আগে মুম্বইয়ে ঘুরে গিয়েছিল রানাও। তাজ হোটেলেই উঠেছিল সে। রানা যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে। উল্টে দাবি করে, ভিসার কাজেই মুম্বইয়ে সস্ত্রীক এসেছিল সে। ইচ্ছাকৃতভাবে হেডলি তাকে ফাঁসাচ্ছে বলেও রানাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল তার পরিবার।
২০১১ সালে তাহাউর হুসেন রানার বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবাকে তথ্য জোগানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তবে ২৬/১১ মামলায় তাকে নিষ্কৃতি দেয় মার্কিন ফৌজদারি আদালত। ২০১৩ সালে ১৪ বছরের জেল হয় তার। তবে যে হেতু আগে থেকেই সে জেলবন্দি ছিল, তাই ২০২১ সালেই সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার আগেই মার্কিন সরকারের সঙ্গে মিলে প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র তৈরি করে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার। এ ব্যাপারে সাহায্য করছে ভারতের ‘কৌশলগত বন্ধু’ দেশ আমেরিকা। এই উদ্দেশ্য নিয়েই সম্প্রতি আমেরিকা সফরে যায় এনআইএ-এর একটি দল। মার্কিন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁদের। রানার কারাবাসের সাজা শেষ হওয়ার আগে কাগজপত্র সংক্রান্ত সব ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেখানে। মার্কিন বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী, যে অপরাধে আগে থেকেই শাস্তি পাচ্ছে অপরাধী সেখানে দ্বিতীয়বার সেই অপরাধীকে সাজা দেওয়া যায় না। রানা জেল খাটছে ডেনমার্কের কাগজের দপ্তরে হামলার ছক কষায় এবং সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার কারণে।
তাই শুধুমাত্র ২৬/১১-এর হামলায় জড়িত থাকার কারণে এবং ভুয়ো অভিবাসন দপ্তর সংক্রান্ত জালিয়াতি মামলা নিয়েই রানার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে চান ভারতীয় গোয়েন্দারা। এছাড়াও দিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স সেন্টার ও ভারতে ইহুদিদের ধর্মীয় স্থানগুলিতে হামলার চালানোর ছক কষছিল বলে অভিযোগ রয়েছে রানার বিরুদ্ধে। তাকে জেরা করা হবে সেগুলি নিয়েও। রানাকে হাতে পেলে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী দেশ হিসাবে আরও কোণঠাসা করতে পারবে ভারত।
[বিপাকে ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় চার্জশিট পেশ পুলিশের]
The post ২৬/১১ চক্রী তাহাউর রানাকে হেফাজতে পেতে চলেছে ভারত appeared first on Sangbad Pratidin.