অর্ণব আইচ: পাঁচশো বা হাজার টাকা ‘ঘুষ’ দিলেই চোখ বন্ধ। গেটের কাছ থেকে ধীর পায়ে সরে যায় নিরাপত্তারক্ষীরা। আর সেই সুযোগেই মেট্রোরেলের লাখ লাখ টাকার লোহার প্রয়োজনীয় বস্তু বা তামার তার লুঠ করে পালায় দুষ্কৃতীরা। সাধারণত রবিবার ভোররাতই এই অপারেশের জন্য যে দুষ্কৃতীরা বেছে নেয়, তা জানতে পারেন পুলিশ আধিকারিকরা। রবিবার ভোররাতেই পালটা অপারেশন চালাল মধ্য কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। পুলিশের পাতা ফাঁদেই ধরা পড়ল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোরেলের মজুত করা জিনিসপত্রের দায়িত্বে থাকা তিন নিরাপত্তারক্ষী। রক্ষকদের ভক্ষক হওয়ার এই রূপান্তর দেখে হতবাক পুলিশকর্তারাও।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তিন নিরাপত্তারক্ষীর নাম স্বর্ণেন্দু সিংহ, বাবলু গোমস ও অজয় সাহা। তারা প্রত্যে যকেই মধ্য কলকাতার বাসিন্দা। ধর্মতলায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোরেলের লোহা ও তামার ধাতব প্রচুর জিনিসপত্র মজুত করা আছে। সেগুলি নজর পড়ে শহরের কিছু দুষ্কৃতীর। মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে একাধিকবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় কিলো কিলো লোহা ও তামার বস্তু চুরির অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্ত শুরু করে পুলিশ আধিকারিকরা দেখেন, সাইকেল ভ্যান নিয়ে আসে দুষ্কৃতীরা। মূলত রবিবার ভোররাতেই তারা লুটপাটের সময় হিসাবে বেছে নেয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ ভ্যানচালক ও আরোহী তথা দুষ্কৃতীদের সন্ধান চালাতে শুরু করে। সেই সূত্র ধরেই কয়েকজন দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরে ফেলে।
[আরও পড়ুন: আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বহুতলের সিঁড়ি, আটকে কমপক্ষে ৫৪ বাসিন্দা, চাঞ্চল্য কলকাতায়]
পুলিশ জানতে পারে যে, মেট্রোরেলের পক্ষে একটি নিরাপত্তা সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়। সেই সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ এড়িয়ে কীভাবে তারা লুঠপাট চালায়, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার পর দুই দুষ্কৃতী পটল ও মিঠুনকে জেরা করে চোখ কপালে ওঠে পুলিশের। ধৃতরা জেরার মুখে জানায়, মেট্রোরেলের ওই নিরাপত্তারক্ষীদের রীতিমতো ‘ঘুষ’ দিয়ে হাত করে তারা। রবিবার রাতে সাধারণত ডিউটিতে থাকে স্বর্ণেন্দু, বাবলু, অজয়রা। সাইকেল ভ্যান নিয়ে এসে পটল, মিঠুনরা ওই নিরাপত্তারক্ষীদের একেকজনকে পাঁচশো বা হাজার টাকা করে দেয়। তার সঙ্গে কমিশনের প্রতিশ্রুতি। তাতেই গেট ছেড়ে সরে পড়ে নিরাপত্তারক্ষীরা।
এই পদ্ধতিতেই অন্তত দেড়শো কিলো লোহা ও প্রচুর তামার তার লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। এদিন ভোররাতে পুলিশ আধিকারিকদের কাছে খবর আসে যে, ফের ধর্মতলায় হানা দিচ্ছে দুষ্কৃতীদের একটি দল। সেইমতো ধর্মতলায় ফাঁদ পাতে পুলিশ। দূর থেকে দুষ্কৃতীদের আসতে দেখেন তাঁরা। আবার দেখেন নিরাপত্তারক্ষীদের সরে যেতেও। পুলিশের টিম কাছে আসতেই পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। হাতেনাতে ধরা পড়ে পুরো বিষয়টিই স্বীকার করে তিন নিরাপত্তারক্ষী। তাদের জেরা করে অন্য কোনও নিরাপত্তারক্ষী যুক্ত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।