অর্ণব আইচ: সারা কলকাতা (Kolkata) জুড়ে মাদকের নেটওয়ার্ক। ভিনরাজ্য থেকে হেরোইনের মতো মারাত্মক মাদক এনে মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া হয়ে কলকাতায় পাচার করত দম্পতি। আবার কখনও সেই মাদক কলকাতা হয়ে পাচার হত বাংলাদেশেও। কলকাতা থেকে সাড়ে সাত কোটি টাকার মাদক পাচার করার অভিযোগে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেপ্তার হল গার্ডেনরিচের দম্পতি জওহর ইমাম ও নিশারজা বিবি। এসটিএফের হাতে ধরা পড়েছে তাদের দুই সঙ্গী, যারা নদিয়ার বাসিন্দা। একটি গাড়ির গোপন কুঠুরিতে অন্তত তিনটি প্যাকেটে করে প্রায় দেড় কিলো মাদক পাচার করে এই চক্রটি। তাদের কাছে এই সাড়ে সাত কোটি টাকার মাদক ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে মাদক বিক্রির প্রায় ৬ লক্ষ টাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজের কয়েকটি জায়গায় হেরোইনের ‘ঘাঁটি’ তৈরি করেছিল দম্পতি জওহর ইমাম ও নিশারজা। তারা মাদক কিনত মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার কয়েকজন এজেন্টের কাছ থেকে। গোয়েন্দাদের ধারণা, উত্তর পূর্ব ভারত ও রাজস্থানের দিক থেকে আসত ওই হেরোইন। যদিও এর আগে মুর্শিদাবাদেও কয়েকটি গোপন ডেরায় হেরোইন বা ব্রাউন সুগার তৈরির কারখানা পুলিশ খুঁজে পেয়েছিল, যেখানে আফিমের গুঁড়ো বা ‘আটা’ ও অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইডের মতো রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হয় ওই মাদক। সম্প্রতি নদিয়ার দুই কুখ্যাত মাদক পাচারকারী কওসর শেখ ও সুদীপ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই দম্পতি। হেরোইনের ‘অর্ডার’ দেয়। তারা দম্পতিকে জানায়, ভাল মানের ওই হেরোইনের দাম পড়বে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। এই দামেই দম্পতি কিনতে রাজি হয়ে যায়। সেইমতো শনিবার সন্ধেয় কওসর ও সুদীপ গাড়ি করে রওনা দেয়। গাড়ির গোপন কুঠুরিতে রাখা ছিল মাদকের প্যাকেট। কলকাতায় ঢোকার আগেই তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল ওই দম্পতি। তারা মাদকচক্রের পান্ডা কওসরকে জানায়, রাস্তায় তারা মাদক নেবে না। গার্ডেনরিচে তাদের একটি ডেরায় গিয়ে নেবে ওই সাড়ে সাত কোটি টাকার মাদক। বিশ্বাস অর্জনের জন্য গাড়িতেই কওসরকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা দেয় জওহর ইমাম।
[আরও পড়ুন: পকেটমারির অভিযোগে ধৃত অভিনেত্রীর জেল হেফাজতের নির্দেশ, ভেঙে পড়লেন কান্নায়]
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওয়াটগঞ্জের কাছে অপেক্ষা করছিল এসটিএফের গোয়েন্দাদের একটি টিম। গাড়িটি খিদিরপুর পেরিয়ে গার্ডেনরিচে ঢোকার আগেই তাঁরা গাড়িটিকে আটকে তল্লাশি চালান। ভিতর থেকে উদ্ধার হয় প্রায় দেড় কিলো মাদক। গাড়ির ভিতরে থাকা ওই দম্পতি ও নদিয়ার দুই বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে গাড়িটি। যদিও ধরা পড়ার পর নিশারজা নামে ওই মহিলা গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করে, সে জানত না যে তার স্বামী জওহর মাদকের কারবার করে। সে শুধু স্বামীর সঙ্গে গাড়িতে ছিল। মাদকের কারবারের সঙ্গে যে যুক্ত নয়। যদিও তার এই দাবি মানতে রাজি নন গোয়েন্দারা। তাঁরা খবর নিয়ে জেনেছেন, ওই দম্পতি সারা কলকাতাজুড়ে মাদকের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। বাইরে থেকে নিয়ে আসা মাদকের একটি অংশ পুরিয়া করে লোকেদের দিয়ে বিক্রিও করত তারা। বাকিটা পাচার করত বাইরে। দম্পতিকে কেউ সন্দেহও করত না। রবিবার ধৃত চারজনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাদের একদিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফের সোমবার তাদের ব্যাঙ্কশালের বিশেষ মাদক আদালতে তোলা হবে। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার ‘ড্রাগ কুইন’ শাহিদা বিবি গ্রেপ্তার হয় লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। তখনই জানা যায় যে, অটো করে তাকে মাদক পাচার করা হত। এই পাচারের সঙ্গে এই দম্পতি কোনওভাবে যুক্ত কি না, সেই তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, একইদিনে গঙ্গার ধারে বিপুল পরিমাণ গাঁজা পাচার করতে গিয়ে উত্তর বন্দর থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে দু’জন। রাহুল সাউ ও রোহিত সাউ নামে পাচারকারী ওই দুই যুবক আসলে হাওড়ার বাসিন্দা। তারা একটি বাইকে করে শনিবার রাতেই উত্তর বন্দর এলাকার আহারিটোলা ঘাটে পৌঁছয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন পুলিশ আধিকারিকরা। অভিযুক্তরা ওই গাঁজা পাচারের ছক কষেছিল। পাচারের আগেই বাইক সহ দুই পাচারকারী রাহুল সাউ ও রোহিত সাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় সাড়ে পাঁচ কিলো গাঁজা। ধৃতদের জেরা করে কলকাতার যে ব্যক্তিকে সে ওই মাদক পাচারের ছক কষেছিল, তাদের সন্ধান চলছে।