সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এভারেস্ট অভিযানে নিখোঁজ চার পর্বতারোহীর মধ্যে দু’জনের খোঁজ মিলল৷ নিখোঁজ দুই পর্বতারোহী সুনীতা হাজরা ও পরেশ নাথের খোঁজ মিলল রবিবার সকালে৷ এখনও সন্ধান মেলেনি গৌতম ঘোষ ও সুভাষ পালের৷ শনিবার ভোরে এভারেস্টে জয়ের পরই চার পর্বতারোহীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল৷ যদিও মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের বক্তব্য ছিল, অন্য কোনও পথে শিবিরে নামছিলেন তাঁরা| এখন প্রশ্ন উঠছে–গৌতম ঘোষ ও সুভাষ পাল যদি হারিয়ে না গিয়ে থাকেন, তবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না কেন? তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, যে তাঁদের সঙ্গে থাকা স্যাটেলাইট ফোন বা ওয়াকিটকি বিকল হয়ে গিয়েছে, তা হলে আরও ভয়ঙ্কর একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে৷ তা হল, পর্বতারোহীদের সঙ্গে থাকা ১২-১৩ ঘণ্টার অক্সিজেন কতক্ষণ সঙ্গ দেবে তাঁদের৷ এখনও পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি ওই দু’জনের৷ রবিবার সকালে চার শেরপা উদ্ধার করে সুনীতাদের৷
শুক্রবার সন্ধে সাতটার সময় এভারেস্টের ক্যাম্প ফোর থেকে একসঙ্গে যাত্রা শুরু করেন আটজন বাঙালি পর্বতারোহী৷ এঁদের মধ্যে সুভাষ পাল ও খোঁজ না পাওয়া তিন পর্বতারোহী পরেশ নাথ, সুনীতা হাজরা, গৌতম ঘোষ ছিলেন একটি দলে৷ অন্য দলটিতে ছিলেন সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, রুদ্রপ্রসাদ হালদার, রমেশ রায়, মলয় মুখোপাধ্যায়৷ অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্বতারোহীরাও ছিলেন দু’টি দলে৷ কথা ছিল ভোরবেলা এভারেস্টের শিখর ছুঁয়ে শনিবার বেলা ১১টার মধ্যে পর্বতারোহীরা নেমে আসবেন দু’নম্বর শিবিরে৷ কিন্তু, শনিবার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার অনেক পরেও খোঁজ মেলেনি ওই তিন বাঙালি-সহ আটজন পর্বতারোহীর৷ সন্ধে ৭টা ৫০ মিনিট নাগাদ মলয় মুখোপধ্যায়, সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও তাঁদের দলটি অন্য রাস্তা ধরে চার নম্বর শিবিরে পৌঁছলেও রাত পর্যন্ত কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছিল না পরেশ নাথ, সুনীতা হাজরা, গৌতম ঘোষ ও সুভাষ পালের৷ আজ সকালে সুনীতা হাজরা ও পরেশ নাথের খোঁজ মিললেও এখনও নিখোঁজ গৌতম ঘোষ ও সুভাষ পালের৷
দু’বছর আগের কথা৷ ২০১৪ সালের এই দিনেই (২১ মে) কাঞ্চনজঙ্ঘায় হারিয়ে গিয়েছিলেন বাঙালি মেয়ে ছন্দা গায়েন৷ তুষার ধসে মৃত্যু হয় তাঁর৷ পাহাড় নিয়ে যাঁরা সংস্কারমনস্ক, তাঁদের অনেকেই উল্লেখ করছেন এই অভিশপ্ত তারিখের কথা৷ রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য শনিবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খোঁজ না পাওয়া বাঙালি অভিযাত্রীদের সন্ধানে পাঁচজন দক্ষ শেরপাকে নামানো হয়েছে৷ যোগাযোগ করা হয়েছে আধিকারিকদের সঙ্গে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিখোঁজ বাঙালি পর্বতারোহীদের খুঁজে পেতে সমস্তরকম চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার৷ নেপালের প্রশাসনিক দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে৷ প্রতি মুহূর্তে চলছে তথ্য দেওয়া-নেওয়া৷
গত ৭ এপ্রিল এভারেস্টের উদ্দেশে রওনা হন এই পর্বত অভিযাত্রীরা৷ তাঁদের মধ্যে পরেশ নাথের বয়স ৫৮৷ একটা হাত নেই তাঁর৷ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই উঠেছিলেন এভারেস্টে৷ এর আগে দু’বার চেষ্টা করেও সফল হননি৷ তাই শনিবার সকালে যখন তাঁর এভারেস্ট জয়ের খবর জানা গেল, তখন আনন্দের বান ডেকেছিল দুর্গাপুরের বাড়িতে৷ দেশে তিনিই প্রথম শারীরিক প্রতিবন্ধী যিনি এভারেস্টে উঠলেন৷ তাই সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল মিষ্টি মুখ৷ দুর্গাপুরের বাসিন্দা পরেশনাথের টেলারিংয়ের দোকান রয়েছে৷ আর্থিক অনটন সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি তিনি৷ ছেলের পড়াশোনার খরচ, মাথায় দশ লক্ষ টাকার দেনা নিয়েই এভারেস্ট জয়ে বেড়িয়ে পড়েন তিনি৷ সুনীতা হাজরার বয়স ৪২৷ তিনি স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী৷ বারাসতের নোয়া পাড়ার পালপাড়ার বাসিন্দা৷ স্বামী সুদেব হাজরা পর্বতারোহনের ইক্যুইপমেণ্টের ব্যবসায়ী৷ ছেলে ক্লাস সিক্সে পড়ে৷ বাড়ির সঙ্গে তাঁর শেষ যোগাযোগ হয় ১৭ মে৷ বেসক্যাম্প থেকে৷ নিখোঁজ আর এক বাঙালি গৌতম ঘোষ৷ বারাক পুরের বাসিন্দা৷ পেশায় পুলিশ কর্মী৷ প্রসঙ্গত শুক্রবারই ধৌলগিরি পর্বত শৃঙ্গ থেজেয় করে ফেরার পথে অক্সিজেন ফুরিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় রাজীব ভট্টাচার্য্য নামে আর এক বাঙালি পর্বতারোহীর৷
The post খোঁজ মিলল ২ এভারেস্ট জয়ীর, এখনও নিখোঁজ ২ appeared first on Sangbad Pratidin.