সুমন করাতি, আরামবাগ: বড় বড় ইটের গম্বুজ। চুন-সুড়কির আস্তরণ সরে গিয়ে হাঁ করে আছে ইটগুলো। ভেঙে পড়েছে ছাদ। বাড়ির গায়ে গজিয়ে উঠেছে অশ্বথ। আগাছায় ভরে চারদিক। দূর থেকে দেখলে পোড়োবাড়ি ভাবলে ভুল হবে না। তবে বাড়ি দেওয়ালে দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ আজও স্পষ্ট । এছাড়া রয়েছে আরও হস্তশিল্পের ছোঁয়া। অবহেলায় ভগ্ন প্রায় দশা বালির (Bally) শিবকুঠির। সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস।
হুগলির (Hooghly) গোঘাটের বালি এলাকায় বাস ছিল মিশ্র পরিবারের। ইংরেজদের সময়ে জমিদারী ছিল এই মিশ্র পরিবাবের। জানা যায়, ইংরেজদের আমলে জমিদার ছিলেন শিব মিশ্র ও তার ভাই শংকর মিশ্র। তৎকালীন সময় ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নীল চাষে নিযুক্ত চাষিদের এই কুঠির থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন অত্যচারী শিববাবু। পরবর্তী সময়ে শিববাবুকেই দায়িত্ব দিয়ে এই এলাকা ছেড়ে চলে যায় ইংরেজরা। তার পর থেকে নাকি আরও বাড়ে অত্যাচারের মাত্রা। অপশাসন ও শোষণের এক অভাবনীয় ইতিহাসের সাক্ষী এই বাড়ির প্রত্যেকটি ইট। জরাজীর্ণ ভগ্নপ্রায় শিবকুঠির (Shiv Kuthi) কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে সেই সময়ের অত্যাচারের কাহিনী।
[আরও পড়ুন: আরামদায়ক আবহাওয়ায় ইতি, তাপমাত্রার ঊর্ধ্বমুখী পারদে শুরু গরমের ইনিংস]
দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করার পর হঠাৎ করেই একদিন হারিয়ে যায় ওই অত্যাচার পরিবার। বর্তমান প্রজন্মের কেউ বেঁচে কিনা তা জানেন না কেউ। একা নীরবে প্রকৃতির বিভিন্ন বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করছে শিববাবুর কুঠি। এই কুঠিরে স্থাপত্য এমন যা বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য বলে জানান স্থানীয়রা। গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “প্রায় ৪০০ বছর আগে এই কুঠি তৈরি হয়। এই জমিদারদের নীল চাষ ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন ব্য়বসা ছিল ওদের। সেই টাকা দিয়ে বানায় এই বাড়ি। তার পর একদিন ওরা রাতারাতি এখান থেকে চলে যায়। ওদের বংশ আছে কী না জানা নেই।” সংস্কার না করার ফলে নষ্ট হচ্ছে এই বাড়ি। কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস।
[আরও পড়ুন: ব্যবধান ২ মাসের, ইডির সিল করা তালা ভেঙে শাহজাহানের বাড়িতে CBI]