সুকুমার সরকার, ঢাকা: একটি টিভি চ্যানেলের টক শো’য়ে পারস্পরিক আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণ শেষ পর্যন্ত গড়াল ঢাকার আদালতে৷ বাংলাদেশের প্রাক্তন তদারকি সরকারের উপদেষ্টা তথা দৈনিক ‘নিউ নেশন’-এর সম্পাদক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখিকা মাসুদা ভাট্টির মধ্যে দ্বন্দ্বে সরগরম বাংলাদেশ। টক শো’য়ে প্রকাশ্যেই মাসুদাকে ‘চরিত্রহীন’ বলেছিলেন ব্যারিস্টার হোসেন। আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি মানহানি মামলা হয়। দু’টি মামলাতেই উচ্চ আদালতে আবেদন করে জামিন পেয়েছেন তিনি। এরমধ্যেই অনেক মানুষ মাসুদার পাশে দাঁড়িয়ে মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে বলছেন। বাংলাদেশের ৫৫ বিশিষ্ট সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন।
[বড় সাফল্য বাংলাদেশ পুলিশের, পুরসভার মধ্যে থেকে গ্রেপ্তার ৭ জঙ্গি]
এই বিতর্ক ও মামলার মধ্যেই প্রখ্যাত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন মাসুদা ভাট্টির কঠোর সমালোচনা করেছেন। নিজের ‘ভেরিফায়েড’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাসুদা ভাট্টিকে তিনিও ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দিয়েছেন। তসলিমা লিখেছেন, “কে মইনুল হোসেন, কী করেন, কী তার চরিত্র, কী তার আদর্শ আমি জানি না। তবে জানি মাসুদা ভাট্টি একটা ভীষণরকম চরিত্রহীন মহিলা। চরিত্রহীন বলতে আমি কোনওদিন এর-ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝি না। চরিত্রহীন বলতে বুঝি, অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ, অতি ছোট লোক। মাসুদা ভাট্টি এসবের সবই।”
মাসুদা সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তসলিমা লিখেছেন, “এই মহিলার জন্য ১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালে আমার কাছে খুব করে আব্দার করেছিলেন আবদুল গফফার চৌধুরী। লন্ডন থেকে স্টকহোমে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশের মেয়ে। এক পাকিস্তানি লোককে বিয়ে করে এখানে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। এখন ব্রিটেন থেকে ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় তুমিই একমাত্র বাঁচাতে পারো ওঁকে।” আমি বলেছিলাম, “মহিলাকে তো আমি চিনিই না।” এরপর ওই মহিলা আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলে, আমাকে বাঁচান। আপনি না বাঁচালে আমি মরে যাব জাতীয় কান্না। কাউকে কাঁদতে দেখলে নিজের চোখেও জল চলে আসে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাসুদা ভাট্টিকে না তাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলাম। মহিলার জন্য মিথ্যে কথা আমাকে লিখতে হল। আমার চিঠির কারণে মাসুদা ভাট্টির পলিটিকাল অ্যাসাইলাম হয়ে গেল, ব্রিটেনের নাগরিকত্বও হয়ে গেল।
[বাংলাদেশে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াল জাপান]
এরপর তসলিমা লিখেছেন, ‘‘২০০৩ সালে আমার আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড ‘ক’ যখন বাংলাদেশে প্রকাশিত হল, আমি কেন নারী হয়ে দেশের এক বিখ্যাত পুরুষের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছি, আমি কেন নারী হয়ে নিজের যৌনতার কথা লিখেছি, তা নিয়ে সারা দেশের নারী-বিদ্বেষী আর ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী উন্মাদ হয়ে উঠল আমাকে অপমান আর অপদস্থ করার জন্য। আমাকে অবিরাম অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি তো দিতেই লাগল, আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করল। তখন সেই মিছিলে শামিল হল মাসুদা ভাট্টি। আমার বিরুদ্ধে এ যাবৎ যত কুৎসিত লেখা লিখেছে লোকে, সর্বকালের সর্বকুৎসিত লেখাটি লিখেছে মাসুদা ভাট্টি। সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য, সবচেয়ে ভয়ংকর, সবচেয়ে বীভৎস সে লেখা। এত ভয়াবহ আক্রমণ আমার চরমতম শত্রুও আমাকে কোনওদিন করেনি।’’
[জোটে ফাটল, বিএনপি-র ‘ঐক্যফ্রন্ট’ ত্যাগ দুই শরিক দলের]
তসলিমার বলেন, ‘‘ক বইটি নাকি ল্যাম্পপোস্টের নিচে শরীরে ঘা-ওলা রাস্তায় পড়ে থাকা এক বুড়ি বেশ্যার আত্মকথন। মাসুদা ভাট্টি আমার উপকারের জবাব ওভাবেই দিয়েছিল। ও যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে? যত অশ্লীল শব্দবাক্য পৃথিবীতে আছে, তার সবই আমার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হচ্ছে ন’য়ের দশকের শুরু থেকে। আমি তো জনপ্রিয় কলাম লেখক ছিলাম তখন, জনপ্রিয় লেখক ছিলাম, কই কোনও বিশিষ্ট সম্পাদক আর কোনও সিনিয়র সাংবাদিককে তো আমার বিরুদ্ধে হওয়া লাগাতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করতে কোনওদিন দেখিনি। আমার মাথার দাম ঘোষণা করা হল, আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লোকের লং মার্চ হল, সারাদেশে মিছিল হল, সরকার একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ করল, আমার মত প্রকাশের বিরুদ্ধে মামলা করল, আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল, কই দেশের কোনও সম্পাদক বা সাংবাদিক কেউ তো টুঁ শব্দটি করেনি। এই যে আজ ২৪ বছর আমাকে অন্যায়ভাবে কোনও সরকারই দেশে ফিরতে দিচ্ছে না, কোনও বিশিষ্ট জন তো মুখ খোলেন না। একজনের বেলায় বোবা, আরেকজনের বেলায় বিপ্লবী, এ খেলার নাম কী?’’
The post ‘চরিত্রহীন’ মাসুদার পাশে বাংলাদেশের বিশিষ্টরা, তীব্র আক্রমণ তসলিমার appeared first on Sangbad Pratidin.