সন্দীপ চক্রবর্তী: কেন্দ্রীয় কর বাবদ ৬৪০ কোটি টাকা কম, তাই বুলবুল বিপর্যস্ত এলাকায় ত্রাণের কাজ ভালভাবে করতে কিছুটা অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকের পর এভাবেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম না করে বিজেপির উদ্দেশে তাঁর আরও বার্তা, ‘রাজনীতি করবেন না। বুলবুল বিপর্যয় মোকাবিলায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান।’ বিঁধলেন রাজ্যপালকেও। তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মমতার দাবি, সমান্তরাল প্রশাসন চালানো চেষ্টা করা হচ্ছে।
শুক্রবার রাজ্যের বুলবুল বিপর্যস্ত এলাকা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখতে আসছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তার আগে বৃহস্পতিবার নবান্নে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সমস্ত উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছ থেকে খতিয়ান নিয়েছেন। দীর্ঘ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। হিসেবনিকেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘১৫ লক্ষ হেক্টর জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধানজমির প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্র মোট ৬৪০ কোটি টাকা কম দিচ্ছে। রাজ্যের বরাদ্দেও কাটছাঁট করছে। রাজস্ব আদায় ভাল হচ্ছে বলে এই পরিস্থিতিতেও কাজ করতে পারছি। কিন্তু এই টাকায় কত আর কাজ করা যায়? এর দায় কেন্দ্রকেই নিতে হবে।’ কেন্দ্রের কাছে বকেয়া ১৭০০০ কোটি টাকা চেয়ে ফের আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
[ আরও পড়ুন: সিবিআই অফিসার সেজে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে অপহরণ, পুলিশের জালে মূল পাণ্ডা-সহ ৩]
ত্রাণবণ্টন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথ্য দেন যে ইতিমধ্যেই চাল, ডাল, ত্রিপলের পাশাপাশি বিদ্যুৎহীন এলাকার জন্য কেরোসিন, লণ্ঠনও দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত হচ্ছে বিশেষ ‘ডিগনিটি কিটস’, যেখানে ছোট এবং বড়দের পোশাক, স্টোভ, বাসনপত্র, মশারি-সহ একাধিক নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী রয়েছে। সেটাই দেওয়া হবে দুর্গতদের। যাতে একসঙ্গে সবটাই হাতে পান তাঁরা। যদিও বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণবিলি নিয়ে ছোটখাট অশান্তির খবর মিলছে। তবে তাতে আমল দিতে নারাজ প্রশাসনের কেউই। মুখ্যমন্ত্রীরও দাবি, সর্বত্র যথাযথভাবেই ত্রাণ বণ্টন চলছে। দ্রুত সব স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী নাম না করে কার্যত সমালোচনার সুরে বলেন, ‘কেউ কেউ রাজনৈতিক বিতর্ক করে, দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। চাইলে আমরাও রাজনীতি করতে পারি। কিন্তু এই সময়ে রাজনীতি দূরে সরিয়ে রেখে সকলকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই ঝড় নিয়ে কোনও রাজনীতি নয়।’ একইসঙ্গে তিনি এই অভিযোগ তোলেন যে কেউ কেউ অতিসক্রিয়তা দেখিয়ে রাজ্যে সমান্তরাল প্রশাসন তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় একেবারেই কাম্য নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট তাঁর এই ইঙ্গিত আসলে কার দিকে।
[ আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, ‘রসগোল্লা দিবসে’ মাতল মিষ্টিপ্রেমী বাঙালি]
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর জবাব, ‘বুলবুল বিধ্বস্ত এলাকা ভালভাবে দেখতে হলে হেলিকপ্টারে নয়, আমার মতো করে ঘুরে দেখুন। ভাল বুঝতে পারবেন।’ পাশাপাশি, রাজ্যপালও বিপর্যস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।
The post কেন্দ্রের কাছে প্রচুর বকেয়া থাকায় ত্রাণের কাজে সমস্যা, বৈঠকের পর অভিযোগ মমতার appeared first on Sangbad Pratidin.