সম্যক খান, মেদিনীপুর: ‘ব্রাত্য মেদিনীপুর’। রাজ্যে মমতার মন্ত্রিসভায় নাকি বরাবরই ব্রাত্য থাকে এই জেলা! নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রাক্তন দলনেত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এভাবেই সুর চড়িয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রীর তৃতীয় মন্ত্রিসভা ঠিক যেন সেই অভিযোগের জবাব। মমতা প্রমাণ করে দিলেন, রাজ্যের মন্ত্রিসভায় কোনও জেলাই ব্রাত্য নয়। রেকর্ড গড়ে অবিভক্ত মেদিনীপুর থেকে সাতজন বিধায়ককে স্থান দিলেন নিজের মন্ত্রিসভায়। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার দিলেন তাঁদের কাঁধে।
বামফ্রন্ট আমলে একসময় অবিভক্ত মেদিনীপুর থেকে ছ’জন মন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার তাকেও ছাপিয়ে গেল মেদিনীপুর। অতীতের অবিভক্ত মেদিনীপুর তথা পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের সাতজন এবার মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েছেন। ভোটের আগে দলে বিদ্রোহ ঘোষণা করে জেলাকে ব্রাত্য করে রাখার যে গুরুতর অভিযোগ তুলে বিজেপিতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী তাকে যেন সুদে আসলে পুষিয়ে দিলেন তৃতীয়বার বিপুল জনসমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসা মমতা বন্দোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: বিজেপির ৭৭ বিধায়কই পাবেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা, বড় সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের]
এবার ঝাড়গ্রাম থেকে বীরবাহা হাঁসদা, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে দুজন সৌমেন মহাপাত্র ও অখিল গিরি এবং পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে চারজন তথা মানস ভুঁইঞা, হুমায়ুন কবীর, শ্রীকান্ত মাহাতো ও শিউলি সাহা মন্ত্রী হয়েছেন। পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন দুজন। একজন সৌমেন মহাপাত্র ও দ্বিতীয়জন মানস ভুঁইঞা। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন হুমায়ুন কবীর ও অখিল গিরি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চারজন মন্ত্রী পাওয়ায় অভিনন্দনের বন্যা বইছে সোস্যাল মিডিয়ায়। তাঁদের কাছে কাজের প্রত্যাশাও অনেক।
জেলার চারজন মন্ত্রীকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলা সভাপতি তথা এবার প্রথম বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া অজিত মাইতি। তিনি বলেছেন, “তাদের সকলের যুগলবন্দিতে পশ্চিম মেদিনীপুর এবার অসাধাণ ফল করেছে। বিজেপির কাগুজে বাঘের মতো কোনও কোনও নেতা প্রচার করছিলেন যে অবিভক্ত মেদিনীপুরে এবার ৩৫–০ করে দেবেন তারা। তা তো হয়নি উলটে তারাই এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। জেলার ১৫ টি আসনের মধ্যে ১৩ আসনই এসেছে তৃনমূলের দখল।” তাঁর আরও দাবি, কর্মী,সমর্থক থেকে শুরু করে নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাতেই একাজে সফল হয়েছেন তাঁরা। তারই প্রতিদান মুখ্যমন্ত্রী দেওয়ায় খুশি তৃণমূল শিবির।
[আরও পড়ুন: মমতার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় উত্তরবঙ্গের তিন নতুন মুখ, দায়িত্ব পেলেন পরেশ-বিপ্লব-বুলুচিক]
রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, এতদিন মেদিনীপুরে একছত্র রাজত্ব করত অধিকারী পরিবার। মমতার মন্ত্রিসভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব সামলাতেন একা শুভেন্দু অধিকারী। দলীয় সূত্রে খবর তাঁর সহমত ছাড়া জেলার অন্যদের মন্ত্রিত্ব দেওয়া বেশ কঠিন ছিল। ফলে জেলার অন্যান্যরা উঠে আসতে পারেননি। এবার শুভেন্দু দলবদল করায় কার্যত একজোট হয়ে লড়াই করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ‘কঠিন’ লড়াইয়ে সম্মানজনক জয় ছিনিয়ে এনেছেন অখিল গিরি, বীরবাহা হাঁসদা, মানস ভুঁইঞারা। অন্যদিকে ফুল বদলের প্রবল হাওয়াতেও দল ছেড়ে যাননি মুকুল ঘনিষ্ঠ শিউলি সাহা। এই মন্ত্রিত্ব তারই পুরস্কার। পাশাপাশি, গত লোকসভায় জঙ্গলমহলে পায়ের তলার হারানো মাটি ফের শক্ত করতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই সেই উদ্দেশে কাজ শুরু করে দিল দল।