shono
Advertisement

সৌজন্যে হ্যাম রেডিও, ৭৩০ দিন পর ছেলের মুখ দেখতে পেলেন পঁচাত্তরের বৃদ্ধা

দু’‌বছর আগে নৈনিতাল থেকে ভুল ট্রেনে উঠে হাওড়া চলে এসেছিলেন তিনি।
Posted: 11:01 PM Nov 07, 2020Updated: 11:18 PM Nov 07, 2020

অভিরূপ দাস: এক জীবনে দ্বিতীয় জন্ম। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধা। শনিবার, টানা দু’‌বছর পর রাজারহাটের (Rajarhat) হোমে যাঁকে জড়িয়ে ধরলেন সে তাঁর নিজের ছেলে রাজেশ। যাঁকে না দেখে একসময় ঘুম হত না, তাঁর সঙ্গেই দূরত্ব হয়ে গিয়েছিল ১ হাজার কিলোমিটারের। দু’‌বছর আগে নৈনিতালে স্বামীর অফিস থেকে আজমগড়ে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তারপর থেকে পরিবারের কারোর সঙ্গেই দেখা নেই। শেষপর্যন্ত হ্যাম রেডিও ঘরে ফেরাল অসহায় এই বৃদ্ধাকে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, ঘটনাটি দু’‌বছর আগের। পঁচাত্তরের সাবিত্রীদেবীর স্বামী চাকরি করতেন নৈনিতালের সেঞ্চুরি পেপার কোম্পানিতে। সেখানেই গিয়েছিলেন সাবিত্রীদেবী। এরপরই ছেলে নাতি-নাতনিদের দেখার জন্য মন কেমন করছিল। স্বামী অনুরোধ করেছিলেন, কটা দিন অপেক্ষা করতে। সবুর সয়নি। ট্রেনে উঠে বসেছিলেন একাই। উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাড়ি ছিল গন্তব্য। কিন্তু কপালের ফের। ভুল ট্রেন তাঁকে নিয়ে চলে এল হাওড়ায়। বাংলা জানেন না। বুঝতেও পারেন না। দেহাতি ভাষায় লোকজনকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন। লাভ হয়নি। দিন দশেক আধপেটা খেয়ে, ভিক্ষে করেই দিন গুজরান হয়। ফুটপাথে বসে বসেই কাঁদতেন। নানা রাস্তায় ঠোক্কর খেয়ে শেষে ঠাঁই হয় রাজারহাটের কলাবেড়িয়ার সরকারি হোমে।

[আরও পড়ুন: গরু পাচার কাণ্ডে ধৃত এনামুলকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত]‌

ততদিনে স্মৃতি মুছে গিয়েছে। অসংলগ্ন কথা বলেন। শত চেষ্টা করেও হোমের কর্তৃপক্ষ তাঁর বাড়ির ঠিকানা জানতে পারেনি। শেষে হ্যাম রেডিও বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত। সম্প্রতি সেই হোমেরই একজনকে ঠিকানা খুঁজে দেয় হ্যাম রেডিওর অম্বরিশ। এই খবর কানে আসতেই বিচলিত হয়ে পড়েন সাবিত্রী দেবী। অনেকদিন পর বাড়ি ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কথার টোপ দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ঠিকানা জেনে নেন অম্বরিশ। সে ঠিকানায় লোক পৌঁছে যায়। প্রৌঢ়ার ছবি নিয়ে গ্রামে ঘুরতে ঘুরতেই চমকে তাকায় এক যুবক। “এ তো আমার দু’বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মা। এখন কোথায়?”

মা রাজারহাটের হোমে শুনে চোখের জল বাঁধ মানেনি তিন ছেলের। দু’‌বছর আগে নৈনিতালের লালকুঁয়া পুলিশ স্টেশনে তারাও নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। কোনও খোঁজ পাননি। আনলক পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। তাতে কি? মাকে আনতে চারচাকা ভাড়া করছেন রাজেশ। ফুলে ঢাকা গাড়ি করে শোভাযাত্রা করেই মাকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন। ঠিক যখন ভাবতে শুরু করেছিলেন এ দীপাবলিও অন্ধকারে কাটবে তখনই এল এই খবর। রাজেশের কথায়, “এবার আমরা দ্বিগুণ প্রদীপ জ্বালাব। মা আসছেন যে।”

[আরও পড়ুন: ট্রেন চালু হলে যাত্রীকেই নিতে হবে নিজের সুরক্ষার দায়, কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে রেল?]‌

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement