সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রোমোটিং ব্যবসার কোনও বিবাদ থেকে খুন নয়। ডাকাতি বা লুঠ কিংবা অপরিচিত কোনও ব্যক্তির হাতেও এই খুনের ঘটনা ঘটেনি। ব্যক্তিগত কোনও উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই কাছের মানুষের হাতেই খুন হতে হল কড়েয়ার ‘কোটিপতি অটোচালক’ মহম্মদ আবদুল রফিককে। প্রাথমিক তদন্তের পর এই কথাই জানালেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা। এই খুনের জন্য পুলিশের সন্দেহের তির গিয়েছে অটোচালকের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী জাহিদা সেলিম ওরফে নীলুর উপর। সেই কারণে এই নীলুকে কড়েয়া থানায় ডেকে দফায় দফায় জেরা করে পুলিশ। এই জেরায় নীলুর বয়ানে নানা অসংগতি দেখা গিয়েছে বলে বুধবার লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন।
‘কোটিপতি অটোচালক’ ছিলেন আবদুল রফিক (৬৪)। কড়েয়ার তিলজলা রোডে ৬০ কাঠা জমির অন্যতম মালিক ছিলেন তিনি। এই জমির শরিকের সংখ্যা ৪০ জন। সেই জমির উপর ৫টি টাওয়ারের আবাসন তৈরি করছে শহরের একটি নামী নির্মাণ সংস্থা। সেই কারণে আবদুল রফিককে একটি অন্য ফ্ল্যাটে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। রফিকরা ৪ ভাই। তার মধ্যে তিন ভাই থাকেন বাংলাদেশে। সেখানকার নাগরিকত্বও নিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। রফিকের প্রথমপক্ষের স্ত্রীর কোনও সন্তান ছিল না। বছর তিনেক আগে সেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তারপরেই রফিক বিয়ে করেন ব্রাইট স্ট্রিটের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ৪০ বছরের মহিলা নীলুকে। ঘটনার আগের দিনই অর্থাৎ সোমবার নীলু বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। রফিক নিজের অটোয় স্কুলের ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের স্কুল থেকে নিয়ে আসা ও নিয়ে যাওয়ার কাজ করতেন। মঙ্গলবার স্কুল ছুটি থাকায় তিনি সারাদিন ফ্ল্যাটেই ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টায় তিনি শেষবারের মতো মোবাইলে কথা বলেন স্ত্রীর সঙ্গে। এরপর থেকে ৭টা ১৫ মিনিটের মধ্যেই খুন হন তিনি। লন্ড্রির এক ধোপা কাপড় দিতে এসে দেখেন, তাঁর ফ্ল্যাটের দরজার নিচে দিয়ে বেরিয়ে আসছে রক্ত। তিনিই তখন পাশের প্রতিবেশীদের ডেকে ঘটনাটি জানান। এরপর পুলিশ এসে রফিকের গলা কাটা মৃতদেহ উদ্ধার করে। তাঁর ফ্ল্যাটের ড্রয়ার থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ ৭ লক্ষ টাকা। মিলেছে স্ত্রীর সোনার বালা, আংটি ও চারটি মোবাইল ফোন।
[আরও পড়ুন: শ্যালিকার সঙ্গে পরকীয়া জানাজানি হওয়ায় আত্মঘাতী জামাইবাবু, আশঙ্কাজনক তরুণী]
তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রোমোটিংয়ের জন্য প্রোমোটারের কাছ থেকে রফিক অগ্রিম বাবদ পেয়েছিলেন ২৬ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে ৭ লক্ষ টাকা মিলেছে তাঁর বাড়ি থেকে। বাকি টাকা রয়েছে ব্যাংকে। খুনির সঙ্গে চরম ধস্তাধস্তি হয়েছিল রফিকের। সেই কারণে তাঁর দু’হাত ও আঙুলে চপারের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। রফিক একসময় ছিলেন ভাল বক্সার। থ্রি-ডি পদ্ধতিতে তদন্ত শুরু করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারাও।
The post কড়েয়ার ‘কোটিপতি’ অটোচালক খুন, সন্দেহের তালিকায় দ্বিতীয় স্ত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.