বাবুল হক, মালদহ: রাখে হরি তো মারে কে? মাঝগঙ্গায় ভেলায় পাঁচদিন ভেসেও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার সদ্যোজাত শিশুকন্যা। তবে কলাগাছের ভেলা নয়, প্লাস্টিকের তৈরি বেবি বাথ টব পুলেই ভাসছিল সে। দেখতে অনেকটা খেলনা বেলুনের মতো। সবে কৈলাসে পাড়ি দিয়েছেন উমা। আর ঠিক সেই সময়ে যেন বাস্তবে আর এক দেবীর আগমন বলেই দাবি অনেকের।
ভয়াল গঙ্গার রূপ। আগ্রাসী গঙ্গার ভাঙন চলছে। অথচ মালদহের মানিকচক থানার নয়া বিলাইমারি এলাকায় গঙ্গা থেকেই জীবিত অবস্থায় উদ্ধার সদ্যোজাত শিশুকন্যা। নৌকা নিয়ে বাসিন্দারাই একরত্তিকে উদ্ধার করে। তাকে হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসকদের দাবি, “পাঁচদিন বয়স শিশুটির। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন।” ঢেউ উপচে পড়া নদী থেকে অদ্ভুতভাবে সদ্যোজাত শিশু উদ্ধারের ঘটনা অবাক করে দিয়েছে মানিকচকের নয়া বিলাইমারি এলাকার গ্রামবাসীদের। তাঁদের বক্তব্য, একদিকে ভাঙন। অন্যদিকে ভরা গঙ্গা ফুঁসছে। নদীতে শিশুটি কীভাবে ভেসে এল এবং বেঁচে থাকল, তা সত্যি হতবাক করে দেওয়ার মতোই। মা গঙ্গার আশীর্বাদ ছাড়া ওই সদ্যোজাতের বাঁচা কোনওমতেই সম্ভব ছিল না বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস।
[আরও পড়ুন: ২২ ফুট উঁচু লক্ষ্মী প্রতিমাই চমক এই মণ্ডপের, যাবেন নাকি?]
নয়া বিলাইমারি এলাকার গ্রামবাসী তথা প্রত্যক্ষদর্শী আকমল শেখ বলেন, “শুক্রবার সকালে আমরা কয়েকজন মিলে গঙ্গাপাড়ে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা বড় ধরনের খেলনা বেলুনের মতো কিছু ভেসে যাচ্ছে। সেখান থেকে যেন শিশুর কান্নার আওয়াজ আসছে। তাতেই আমাদের সন্দেহ হয়। এরপরই নদীর পাড় থেকে মাঝিদের নৌকা নিয়ে ছুটে যাই। দেখতে পাই খেলনা বেলুনে ভেলার মতো ভেসে যাচ্ছে সদ্যোজাত। আমরা উদ্ধার করি।”
শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল বলেই তাকে তড়িঘড়ি মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় দিন বয়স হবে শিশুটির। ঘটনাটি মানিকচক থানার পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, কন্যাসন্তান জন্মানোয় কেউ শিশুটিকে এভাবে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। শিশুটি চার থেকে পাঁচদিন ধরে গঙ্গা নদীর স্রোতের অনুকূলে ভেসে চলে আসতে পারে। বিহার কিংবা হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া এলাকা থেকেও ভেসে আসতে পারে শিশুটি বলে মনে করছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা। এই ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিল, কন্যাসন্তান বলেই কি এই পরিণতি? বোঝা ভেবেই কি তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে মাঝগঙ্গায়? উত্তর অধরা।