মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: আগামী নভেম্বর মাসে ছিল বিয়ে। আর জুলাইতে আশীর্বাদ। বিয়ের কেনাকাটাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। নতুন জীবন শুরু হওয়ার কথা ছিল উদয়নারায়ণপুর হরালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলতানপুরের বাসিন্দা রিমা দেঁড়ের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে নতুন জীবনের দীপ আর জ্বলল না। তার আগেই সব শেষ। ভাইজ্যাগ বেড়াতে যাওয়ার পথে ওড়িশার দারিংবাড়ি থেকে নামার পথে মঙ্গলবার রাতে বাস উলটে মৃত্যু হল তাঁর। শুধু রিমা ই নয় ওই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে রিমার মা মৌসুমী দেঁড়ের। আহত হয়েছেন রিমার বাবা হারাধন দেঁড়ে ও রিমার বোন মেঘনা দেঁড়ে। মেঘনা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভরতি। তাঁর পায়ে গুরুতর আঘাত লেগেছে। সম্ভবত তাঁর পা বাদ দিতে হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় উদয়নারায়ণপুরের সুলতানপুরের আরও তিনজনের এবং হুগলির জাঙ্গিপাড়ার একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রিমা উদয়নারায়ণপুর মাধবীলতা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আগামী নভেম্বরে বিয়ের কথা। আমতা দু’নম্বর ব্লকের জয়পুর এলাকায় বিয়ে ঠিক হয়। রিমার বউদি রানু দেঁড়ে বলেন, “গত বছরের নভেম্বরে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পাত্রপক্ষ এক বছর সময় চেয়েছিল। তাই অপেক্ষা করতে হল। যদি বিয়েটা হয়ে যেত তাহলে বোধহয় আজ এই দিন দেখতে হত না।” আক্ষেপে গলা বুজে এল রানুর। তিনি আরও বলেন,
“এক বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। এক বছর ধরে আমি মিশছি রিমাদের পরিবারের সঙ্গে। অত্যন্ত ভাল এবং মিষ্টি মেয়ে ছিল রিমা। পরিবারও অত্যন্ত ভাল। বেড়াতে যাওয়ার আগে ২২ তারিখ বিকেলে রিমার সঙ্গে হবু জামাই দেখা করতে এসেছিল উদয়নারায়ণপুরে। তাঁদের দেখা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের আর মিলন হল না।”
[আরও পড়ুন: হাঁস খুঁজতে তিল খেতে যাওয়াই কাল! বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু যুবকের]
রিমার বাবা হারাধন দেঁড়ে কলকাতায় কাজ করেন। বেড়াতে যাওয়ার জন্য গত ২২ মে বাড়ি ফিরেছিলেন। রিমার মা মৌসুমী দেঁড়ে অবসর সময়ে আংটি ও হারে পাথর বসানোর কাজ করতেন। রিমার বোন মেঘনা সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। শুধু রিমাদের পরিবারই নয়, তাঁর ছোটকাকা মৃত্যুঞ্জয় দেঁড়ে ও কাকিমা পুতুল দেঁড়েও একই সঙ্গে গিয়েছেন। মৃত্যুঞ্জয়বাবুর চোখে এবং পুতুলের কোমরে গুরুতর আঘাত লেগেছে। রিমার অন্য এক কাকুর ছেলে কৃষ্ণপদ দেঁড়ে, তাঁর স্ত্রী রিয়া দেঁড়ে ও তাঁদের চার বছরের মেয়ে পাপড়ি দেঁড়েও গিয়েছেন। সকলেই কমবেশি আহত হয়েছেন।
এছাড়া মৃত বর্ণালী মান্নার স্বামী দীনবন্ধু, ছেলে আকাশ, মেয়ে মেঘলার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন। আরও এক মৃত সুপ্রিয়া দেঁড়ের স্বামী লালটু ও ছেলে রাজেশ দেঁড়েও সঙ্গে গিয়েছিলেন। মৃত সঞ্জিত পাত্রও স্ত্রী জয়ন্তী, ছেলে সন্তু ও মেয়ে জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার পর আনন্দ রূপ নিল বিষাদের।